ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগের সরকার পতনে নেতৃত্বে দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম থেকে বেরিয়ে নতুন একটি ছাত্র সংগঠন গঠনে উদ্যোগের কথা জানিয়েছেন ছাত্রদের একাংশ।
তারা বলছেন, গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার যে অভ্যুথান হয়েছে, তা হবে তাদের নতুন সংগঠনের ভিত্তি।
ডেইলি স্টারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নতুন এই সংগঠনের বিষয়ে জানাতে সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানে জানানো হয়, নতুন এই ছাত্র সংগঠন গড়ে তোলার লক্ষ্যে সারাদেশে শিক্ষার্থীদের মধ্যে জনমত জরিপ পরিচালনা ও সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম সোমবার শুরু হয়েছে, যা মঙ্গলবারও চলবে।
অনলাইনের পাশাপাশি ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, জগন্নাথ, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়অধিভুক্ত কলেজ এবং স্কুল ও মাদ্রাসায় এই জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা ও সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম চলবে বলেও জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শীর্ষ নেতাদের নেতৃত্বে যখন শিক্ষার্থীদের নতুন একটি রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে, ঠিক সেই সময়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম থেকে বেরিয়ে নতুন ছাত্র সংঠন গড়ে তোলার এই ঘোষণা দিল ছাত্রদের একাংশ।
এ বিষয়ে সোমবারের সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, শিক্ষার্থীদের নতুন যে রাজনৈতিক দল আসছে, তার সঙ্গে তাদের এই নতুন ছাত্র সংগঠনের কোনো সম্পর্ক থাকবে না।
এ ছাড়া নতুন ছাত্র সংগঠনটির নেতৃত্ব কে দেবেন বা কবে এটি আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করবে তাও উল্লেখ করা হয়নি সংবাদ সম্মেলনে।
সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আব্দুল কাদের ও আবু বাকের মজুমদার বক্তব্য দেন। তারা জানান, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে তাদের নতুন ছাত্র সংগঠনের নেতৃত্ব নির্বাচিত হবে। নতুন এইসংগঠনটি কোনো রাজনৈতিক দলের সহযোগী সংগঠন হবে না।
কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শীর্ষ নেতারা যখন নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের দ্বারপ্রান্তে, তখন এই প্ল্যাটফর্ম থেকে বেরিয়ে ছাত্রদের একাংশ কেন নতুন ছাত্র সংগঠন গড়ায় তৎপর হলো- বিভিন্ন মহলে উঠছে সেই প্রশ্ন।
এ ছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের মধ্যে ‘মতবিরোধ’ ছাত্রদের একাংশকে নতুন ছাত্র সংগঠনের গড়ে তোলার পেছনে ভূমিকা রাখছে কি না, সেই প্রশ্নও আসছে।
এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে কিছুটা ধারণা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। জানানো হয়, নতুন ছাত্র সংগঠনটি নিজস্ব কর্মসূচির ভিত্তিতে স্বাধীনভাবে কাজ করবে এবং এর কোনো লেজুরবৃত্তিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থাকবে না।
সমকালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নতুন ছাত্র সংগঠন গঠনের প্রেক্ষাপট সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন আব্দুল কাদের। তিনি বলেন, “আন্দোলন চলাকালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, বাম ছাত্র সংগঠনসহ একাধিক ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা যুক্ত হয়েছিলেন। কিন্তু আন্দোলন পরবর্তী সময়ে সবাই তাদের নিজস্ব সংগঠনে ফিরে গেছেন। কিন্তু এর বাইরে একটা বিশাল সংখ্যক শিক্ষার্থী এসেছিল, যারা কোনো সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। তাদের তো এখন কোনো যাওয়ার জায়গা নেই। সেই দিকটা বিবেচনা করেই আমরা একটা ছাত্র সংগঠন প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে কোনো ধরনের বিভাজন তৈরি হয়নি বলেও এ সময় দাবি করেন কাদের। তিনি বলেন, “এখানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিভাজন হয়নি বা এখানে অনুমতি নেওয়ার তেমন কিছু নেই।”
তবে যারা ছাত্রদের নতুন সংগঠনের সদস্য হবেন কিংবা পদ পাবেন তারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে পদত্যাগ করবেন বলে কালবেলাকে জানান কাদের।
কালবেলার এ সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,নতুন সংগঠনটি অনেকটা বিলুপ্ত ছাত্রসংগঠন ‘গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি’র আদলে পরিচালিত হবে। ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেনকে আহ্বায়ক করে ২০২৩ সালের ৪ অক্টোবর আত্মপ্রকাশ করেছিল ‘গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি’। বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করা নাহিদ ইসলাম ছিলেন ‘গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি’র সদস্য সচিব। অন্তর্বর্তী সরকারের আরেক উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সেই সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক ছিলেন।
এদের বাইরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের অনেকেই ছাত্রশক্তির সদস্য ছিলেন। জুলাই অভ্যুত্থানের পর গত ১৪ সেপ্টেম্বর সংগঠনটি বিলুপ্ত করা হয়।
এ সম্পর্কিত আরও খবর: