ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সব কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেছে বাংলাদেশ কংগ্রেস নামে একটি রাজনৈতিক দল।
নির্বাহী বিভাগের ভূমিকা নিয়ে ‘প্রশ্ন’ তুলে নিবন্ধিত এ রাজনৈতিক দলটির করা রিটের শুনানি আগামী সপ্তাহে বিচারপতি সিকদার মাহমুদুর রাজীর নেতৃত্বাধীন হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চে উঠতে পারে।
বুধবার (৪ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ কংগ্রেসের মহাসচিব অ্যাডভোকেট ইয়ারুল ইসলাম এ রিট দায়ের করেন।
রিট আবেদনে বাংলাদেশ কংগ্রেস উল্লেখ করেছে, সংবিধানে স্পষ্টভাবে দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা নির্বাচন কমিশন পরিচালনা করবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আর নির্বাহী বিভাগ কমিশনকে শুধুমাত্র সহযোগিতা করবে।
কিন্তু বাস্তবে দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচন কমিশন সচিবালয় এবং রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব নির্বাহী বিভাগের কর্মকর্তারা পালন করছে বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ কংগ্রেস।
রিটে দলটি যুক্তি দিয়েছে, নির্বাহী বিভাগের লোকবল দিয়ে নির্বাচন পরিচালনা করলে কমিশনের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ হয় এবং সরকারপক্ষে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ ওঠে।
এরফলে নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয় এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট হয় বলে অভিযোগ তুলেছে দলটি।
রিটে নির্বাচন কমিশনের জন্য আলাদা নিজস্ব জনবল কাঠামো তৈরির জন্যে ‘ইলেক্টোরাল সার্ভিস কমিশন’ গঠনেরও দাবি জানানো হয়েছে।
এই কাঠামো থেকে সচিব, রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ মাঠপর্যায়ের সব নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানানো হয়।
রিটে বলা হয়, বিচার বিভাগের মতোই নির্বাচন কমিশনকে একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা জরুরি। এ জন্য নিজস্ব ক্যাডার এবং আলাদা জনবল থাকা প্রয়োজন।
বর্তমান নির্বাহী বিভাগ জনগণের আস্থা ও গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে উল্লেখ করে বলা হয়েছে, সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে তারা সরকারের চাওয়া অনুযায়ী নির্বাচন পরিচালনা করে থাকে। ফলে নির্বাচন নিয়ে নানা সমালোচনা ও সংশয় তৈরি হয়।
এই বাস্তবতায় নির্বাহী বিভাগের মাধ্যমে নির্বাচন পরিচালনা হলে তা সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হবে—এমন বিশ্বাস আর জনগণের মধ্যে নেই বলে রিটে দাবি করা হয়েছে।
রিটকারী অ্যাডভোকেট মো. ইয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, সরকার ও নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) সঙ্গে বৈঠক করেছে। এতে তাদের আবারও নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
তিনি বলেন, “ডিসিদের হাতে নির্বাচনের দায়িত্ব দিলে এটি আরেকটি প্রভাবিত নির্বাচনের ক্ষেত্র তৈরি করবে। জেলা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের নির্বাচন প্রক্রিয়ার কেন্দ্রে আনতে হবে।”
নির্বাচন কমিশন সচিবকে অপসারণের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “এসব পরিবর্তন ছাড়া নির্বাহী বিভাগের প্রভাবমুক্ত রেখে নির্বাচন আয়োজন বাস্তবে সম্ভব নয়।”
রিটে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর কাছে রুল জারির আবেদন করে রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সব কার্যক্রম স্থগিত রাখার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।



