তরুণ ভোটারদের জন্য বিশেষ সুবিধা চান ইউনূস

প্রতীকী ছবি।
প্রতীকী ছবি।

ভোটার হওয়ার বয়স এক বছর কমিয়ে ১৭ করতে চেয়েছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাস্মদ ইউনূস। তাহলে আগামী নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা এক কোটির মতো বেড়ে যেত।

রাজনৈতিক দলগুলোর বিরোধিতার মুখে তিনি তা নিয়ে আর এগোননি। তবে এবার তরুণ ভোটারদের, যারা মোট ভোটারের এক-তৃতীয়াংশ, তাদের বিশেষ সুবিধা দিতে চাইছেন তিনি।

বুধবার নির্বাচন নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত এক সভায় ইউনূস ১৮ থেকে ৩৩ বছর বয়সী ভোটারদের বিশেষ সুবিধা দেওয়ার কথা তোলেন বলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সংবাদ সম্মেলনে জানান।

সুবিধা দুটির একটি হলো- এই বয়সসীমার ভোটারদের জন্য আলাদা ভোটার তালিকা করা। অন্যটি হলো প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে তাদের জন্য আলাদা বুথ রাখা।

কেন এই প্রস্তাব- তার ব্যাখ্যায় প্রেস সচিব আওয়ামী লীগ আমলে অনুষ্ঠিত তিনটি নির্বাচনে নতুন ভোটারদের ভোট দিতে না পারার যুক্তি দেখান।

তিনি বলেন, “আপনারা জানেন যে ২০১৪, ২০১৮, ২০২৪ এই তিনটি নির্বাচনে ভোট রিগ হয়েছিল। আমাদের বিশাল সংখ্যক ইয়াং ভোটার ভোট দিতে পারেননি।”

২০০৯ সালের পর যারা ভোটার হয়েছেন, তারা আওয়ামী লীগ আমলে তিনটি নির্বাচন দেখেছেন। প্রশ্নবিদ্ধ সেই সব নির্বাচনের মধ্যে ২০১৪ সালে অর্ধেকের বেশি আসনে একাধিক প্রার্থী না থাকায় ভোটের প্রয়োজনই পড়েনি।

২০১৮ সালের নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ হলেও ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ ওঠে। ২০২৪ সালের নির্বাচন আবার অধিকাংশ দল বর্জন করে।

তার আট মাসের মাথায় আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার দেড় দশকের শাসনের অবসান ঘটে। তারপর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেন ইউনূস।

তিনি গত ডিসেম্বরে হঠাৎ করেই ভোটার হওয়ার বয়স ১৭ বছরে নামিয়ে আনার প্রস্তাব করেন। তখনই আপত্তি তোলে রাজনৈতিক দলগুলো। কারণ তাদের সন্দেহ ছিল, এর মধ্য দিয়ে অভ্যুত্থানকারী তরুণদের বিশেষ সুবিধা দেওয়ার পাঁয়তারা চলছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, গত বছর দেশে ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সীর সংখ্যা ১ কোটি ৬৫ লাখ ৬৭ হাজার ১৫০ ছিল। তাতে ১৭-১৮ বছর বয়সীদের সংখ্যা আলাদা করা না হলেও গড় হিসাবে এই বয়সীর সংখ্যা ৩৩ লাখ ১৩ হাজার ৪৩০।

অর্থাৎ ভোটার হওয়ার বয়স ১৭ বছর হলে গত বছরই ৩০ লাখের বেশি তরুণ ভোটার যুক্ত হত ভোটার তালিকায়। ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ তালিকা হালনাগাদ হলে আরও ৬০ লাখের বেশি তরুণ যোগ হবে ভোটার তালিকায়। অর্থাৎ ভোটার সংখ্যা প্রায় এক কোটি বেড়ে যাবে।

রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে আপত্তি আসার পর ইউনূস আর এগোননি এনিয়ে। এরপর ফেব্রুয়ারিতে অভ্যুত্থানকারী তরুণরা জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) গঠন করে রাজনীতির মাঠে নেমে পড়ে। তারা প্রশাসনের সহযোগিতাও পাচ্ছে বলে বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের নেতাদের অভিযোগ।

এখন আবার তরুণ ভোটারদের জন্য বিশেষ সুবিধা দেওয়ার কথা তুললেন তিনি।

গত বছরের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ছিল ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৯৩৭। একাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটার ছিল ১০ কোটি ৪১ লাখ ৪২ হাজার ৩৮১ জন। সেই হিসাবে পাঁচ বছরে ভোটার বাড়ে ১ কোটি ৫৫ লাখ। বছরে ভোটার বৃদ্ধি পায় ৩১ লাখের বেশি।

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটার তালিকা হালনাগাদ হলে ভোটার দাঁড়াবে আনুমানিক সাড়ে ১২ কোটির বেশি।

বয়সভিত্তিক ভোটারদের তথ্য অনুযায়ী, ১৮ থেকে ৩৩ বছর বয়সীদের সংখ্যা ৪ কোটির বেশি, যা মোট ভোটারের প্রায় এক- তৃতীয়াংশ।

এই ভোটারদের কেন বিশেষ সুবিধা দিতে ইউনূস চান, তা পুরোপুরি স্পষ্ট নয় প্রেস সচিবের কথায়। তবে তা নিয়েও রাজনৈতিক অঙ্গনে বিরোধিকার সুযোগ রয়েছে, কেননা অন্তর্বর্তী সরকার এনসিপিকে ক্ষমতায় আনতে চায় বলে অনেকের ঘোরতর সন্দেহ।

সাংবিধানিকভাবে ভোটার তালিকা প্রণয়ন থেকে শুরু করে এর তত্ত্বাবধান ও হালনাগাদের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। এখানে সরকারের হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই।

সংবিধানের ১২৬ ধারায় রয়েছে, নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বপালনে সহায়তা করা সকল নির্বাহী কর্তৃপক্ষের কর্তব্য হইবে।

কিন্তু বিশেষ পরিস্থিতিতে সংবিধানকে পাশ কাটিয়ে গঠিত সরকারের প্রধানের দায়িত্ব নিয়ে ইউনূস শুরু থেকে ইসিকে নির্দেশ দিচ্ছেন।

নির্বাচন কবে হবে, তা বলার এখতিয়ার ইসির হলেও ইউনূস প্রথমেই জানিয়ে দেন, ভোটের তারিখ ঠিক করবেন তিনি। এখন অবধি তিনি আগামী বছরের এপ্রিলের কথা বলছেন। তবে প্রস্তুতি সারা হলে ফেব্রুয়ারিতেও ভোট হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন।

১৮ থেকে ৩৩ বছর বয়সী ভোটারদের বিশেষ সুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রেও তিনি ‘নির্দেশ দিয়েছেন’ বলেই সংবাদ সম্মেলনে জানান প্রেস সচিব শফিকুল। পরে অবশ্য বাক্য খানিকটা ঘুরিয়ে তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা এ বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বলেছেন।

আলাদা ভোটার তালিকা বর্তমান সংবিধানের আলোকে সম্ভব কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন থেকে যায়।

সংবিধানের ২১২ ধারায় লেখা রয়েছে, প্রতি এলাকার জন্য একটিমাত্র ভোটার তালিকা থাকবে। ধর্ম, জাত, বর্ণ ও নারী-পুরুষভেদের ভিত্তিতে ভোটারদের বিন্যস্ত করিয়া কোনও বিশেষ ভোটার তালিকা প্রণয়ন করা যাইবে না।

এখানে বয়সের কথা বলা না থাকলেও ‘একটিমাত্র ভোটার তালিকা থাকবে’ লেখা থাকায় আরেকটি ভোটার তালিকা তৈরির সুযোগ থাকে না।

তবে এ কেবলই সংবিধানের কথা। সংবিধান উপেক্ষা করেই এখন দেশ চলছে। ফলে যে কোনও কিছু হলেও তাতে অবাক হওয়ার অবকাশ থাকে না।

এ সম্পর্কিত আরও খবর:

আরও পড়ুন