ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, শান্তি প্রতিষ্ঠার স্বার্থে তিনি প্রেসিডেন্টের পদ থেকে সরে দাঁড়াতে রাজি আছেন, যদি এর বিনিময়ে তার দেশ ন্যাটোর সদস্যপদ পায়।
রাশিয়ার পূর্ণমাত্রায় আগ্রাসনের তৃতীয় বার্ষিকীর প্রাক্কালে রবিবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা জানান।
জেলেনস্কি বলেন, “যদি শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য আমার পদত্যাগ করা প্রয়োজন হয়, আমি প্রস্তুত। আমি এটি ন্যাটোর সদস্যপদের বিনিময়ে করতে পারি, যদি সেখানে এমন কোনো শর্ত থাকে।”
বিবিসি জানিয়েছে, তাকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমালোচনার পর জেলেনস্কি এমন মন্তব্য করলেন। গত সপ্তাহে জেলেনস্কিকে ‘নির্বাচনবিহীন স্বৈরশাসক’ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন ট্রাম্প।
জবাবে ২০১৯ সালের মে মাসে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত হয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়া জেলেনস্কি বলেন, “আমি এতে কষ্ট পাইনি, কিন্তু একজন স্বৈরশাসক হলে পেতেন। আমি আজ ইউক্রেনের নিরাপত্তার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি, ২০ বছর পরের কথা ভাবছি না। আমি দশকের পর দশক ক্ষমতায় থাকতে চাই না।”
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার পূর্ণমাত্রায় সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে ইউক্রেনে মার্শাল ল’ জারি রয়েছে। ইউক্রেনের আইন অনুযায়ী যুদ্ধকালীন সময়ে দেশটিতে নির্বাচন স্থগিত থাকে।
সোমবার জেলেনস্কির পশ্চিমা কয়েকটি দেশের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছ। এর মধ্যে কয়েকটি বৈঠক ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে সশরীরে হবে, বাকিগুলো হবে অনলাইনে। এসব বৈঠকে ন্যাটোতে ইউক্রেনের যোগদানের বিষয়টি আলোচনায় থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জেলেনস্কি আশা করছেন, এসব বৈঠক একটি ‘টার্নিং পয়েন্ট’ হবে। ট্রাম্পের বিষয়ে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে তিনি কেবল একজন মধ্যস্থতাকারী নয়, ইউক্রেনের পক্ষে একজন অংশীদার হিসেবে দেখতে চান।
ইউক্রেনকে এখন পর্যন্ত দেওয়া সামরিক সহায়তার বিনিময়ে এখন দেশটির মূল্যবান খনিজ সম্পদের ভাগ চাইছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়ে জেলেনস্কি বলেন, এ পর্যন্ত মার্কিন সহায়তা অনুদান হিসেবে এসেছে, ঋণ নয়। তিনি বলেন, তিনি এমন কোনো নিরাপত্তা চুক্তিতে রাজি হবেন না, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ওপর ঋণের বোঝা চাপিয়ে দেবে।
তবে খনিজ সম্পদ নিয়ে আলোচনায় অগ্রগতির হচ্ছে জানিয়ে জেলেনস্কি বলেন, “আমরা সম্পদ ভাগ করে নিতে প্রস্তুত, তবে প্রথমে পুতিনকে এই যুদ্ধ শেষ করতে হবে।”
এদিকে জেলেনস্কি সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে তার দেশের ওপর ড্রোন হামলা চালায় রাশিয়া, যাকে এখন পর্যন্ত চালানো সবচেয়ে বড় ড্রোন হামলা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন ইউক্রেনের কর্মকর্তারা।
ইউক্রেনের বিমান বাহিনীর মুখপাত্র ইউরি ইগনাট বলেন, শনিবার রাতে একযোগে রেকর্ড ২৬৭টি ড্রোন হামলা চালায় রাশিয়া। এর মধ্যে ১৩৮টি ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করা হয়। হামলায় বিভিন্ন অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং তিনজন নিহত হয়েছে।