বিএনপির নেতৃত্বে ২২ সদস্যের প্রতিনিধিদল চীন সফরে, লক্ষ্য কী?

বিএনপি নেতা আবদুল মঈন খানের নেতৃত্বে চীন সফরে প্রতিনিধি দল।
বিএনপি নেতা আবদুল মঈন খানের নেতৃত্বে চীন সফরে প্রতিনিধি দল।

চীনের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে বিএনপির নেতৃত্বে ২২ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল ১০ দিনের সফরে বেইজিং গেছে। ওই দলে রাজনৈতিক নেতা, সুশীল সমাজের কর্মী, বুদ্ধিজীবী এবং দুইজন সাংবাদিকও রয়েছেন।

সফরকালে তারা চীনের সরকারি কর্মকর্তা এবং ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।

বাংলাদেশের সময় সোমবার রাত ১০টা ৪০ মিনিটে চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ঢাকা ত্যাগ করেন তারা।

সফরকারী প্রতিনিধিদলে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের পাঁচজন নেতা রয়েছেন। তারা হলেন বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল, জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান ও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন।

বিএনপির পাশাপাশি অন্যান্য দলের আটজন নেতা সফরে সঙ্গী হয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়ক আবুল হাসান মো. শহিদুল ইসলাম, জাতীয় পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান এ জেড এম ফরিদুজ্জামান, জাতীয় ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব আতাউল্লাহ আমিন ও জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা।

এ ছাড়া বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএসএস) গবেষক মো. নাহিয়ান সাজ্জাদ খান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক লাইলুফার ইয়াসমিন প্রতিনিধিদলে রয়েছেন।

জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আহসান জোনায়েদ ও যুগ্ম আহ্বায়ক রাফি সালমান রিফাত, সহমুখপাত্র তাহসিন রিয়াজ ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক মিতু আক্তারও এই সফরে রয়েছেন।

সফরে যে দুজন সাংবাদিক গিয়েছেন তারা হলেন ইউএনবির বিশেষ প্রতিনিধি আবদুর রহমান জাহাঙ্গীর ও দৈনিক আমাদের সময় পত্রিকার কূটনৈতিক প্রতিবেদক মো. আরিফুজ্জামান।

এদিকে মঙ্গলবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি চীন সফর নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

বেইজিংয়ে প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বদানকারী বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা আব্দুল মঈন খান বিবিসিকে বলেন, এটি মূলত একটি সৌজন্যমূলক সফর, যা বেইজিংয়ের উদ্যোগে হয়েছে। এবার বাংলাদেশের বিভিন্ন গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্বকারী দলকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে চীন।

প্রতিনিধিদলে বিএনপি ও তাদের মিত্রদের নেতা ছাড়াও ছাত্র আন্দোলনের বেশ কয়েকজন সদস্যও রয়েছেন। আর এটি ছিল সাম্প্রতিক মাসগুলোর মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো বিএনপি নেতাদের চীন সফর।

শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে বাংলাদেশ ভারত-বান্ধব নীতি অনুসরণ করলেও চীনের সঙ্গেও সম্পর্ক বজায় রেখেছিল। কিন্তু তার পতনের পর চীন বাংলাদেশে নিজেদের প্রভাব আরও বিস্তৃত করার চেষ্টা করছে।

সেই পদক্ষেপের অংশ হিসেবে জানুয়ারিতে বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র নীতি উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বেইজিং সফর করেন এবং চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই-এর সঙ্গে বৈঠক করেন। এমনিতেই চীন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার এবং দুই দেশের বার্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ২৪ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশের সামরিক সরঞ্জামের ৭০% আসে চীন থেকে।

বিএনপি ও অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য সমালোচনা করে আসছে ভারতের, যে-ই দেশটিকে চীনের প্রতিপক্ষ ভাবা হয়ে থাকে।

বিশ্লেষকদের মতে, ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্কের এই টানাপোড়েন ঢাকা-বেইজিং সম্পর্ককে আরও মজবুত করছে। শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ ও নেপালের মতো বাংলাদেশও এখন ভারত-চীন কৌশলগত প্রতিযোগিতার কেন্দ্রে চলে এসেছে।

বেইজিং বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র ফেলো চীনা বিশ্লেষক ঝো বো বিবিসিকে বলেন, ভারতের উচিত পুরো উপমহাদেশকে তাদের ‘বাড়ির উঠান’ মনে না করা। এই মনোভাব ভারতের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বর্তমান কূটনৈতিক দূরত্ব চীনকে বাংলাদেশের ওপর আরও বেশি প্রভাব বিস্তারের সুযোগ করে দিয়েছে।

আরও পড়ুন