অধ্যাপক আলী রিয়াজের বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে এক নারীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন এবং জোরপূর্বক গর্ভপাত ঘটানোর অভিযোগ ওঠেছে।
অতন্দ্রানু রিপা নামে এক নারী মঙ্গলবার ফেইসবুক লাইভে এসে প্রধান উপদেষ্টার এই বিশেষ সহকারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলার পর বুধবার বিবৃতি দিয়েছে প্রেস উইং।
আলী রীয়াজের পক্ষ নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের দেওয়া বিবৃতিতে ওই নারীর অভিযোগকে মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন বলে দাবি করা হয়।
এর আগে নিজেকে কবি দাবি করে আলী রীয়াজের সঙ্গে সম্পর্কের নানা দিক তুলে ধরেন অতন্দ্রানু রিপা, যা মুহূর্তের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
ফেইসবুকে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে ওই নারী অভিযোগ করেন, বর্তমানে তিনি প্রাণনাশের হুমকিতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
অতন্দ্রানু রিপা জানান, কবিতার সূত্র ধরে ২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে ফেসবুকে আলী রীয়াজের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। আলী রীয়াজ নিজের একাকিত্ব ও নিঃসঙ্গতার কথা বলে সম্পর্ক এগিয়ে নেন, বাড়ে সম্পর্কের গভীরতা।
“গত বছর আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ড. ইউনূস সরকারের হয়ে কাজ করতে তিনি ঢাকায় আসেন এবং আমাকে ডেকে নেন। আমরা প্রথমে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে কয়েকদিন থাকি এবং পরবর্তীতে বিভিন্ন স্থানে যাই।”
ওই নারীর দাবি, অধ্যাপক রীয়াজ তাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়েছিলেন এবং খুব দ্রুত তাকে আমেরিকায় নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
শারীরিক সম্পর্কের একপর্যায়ে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছিলেন বলেও জানান অতন্দ্রানু রিপা নাম বলা ওই নারী।
তার ভাষায়, “উনি বারবার আমাকে বুঝিয়েছিলেন যে ওনার ভ্যাসেকটমি করানো আছে, তাই প্রোটেকশনের প্রয়োজন নেই। আমি ওনার মতো বড় মাপের মানুষকে বিশ্বাস করেছিলাম।”
গর্ভধারণের পর থেকে আলী রীয়াজ এড়িয়ে চলতে শুরু করেছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, “এরপর দিলরুবা শারমিন নামে এক নারী তাকে ফোন করে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির দোহাই দিয়ে এবং আলী রীয়াজের বিপদের কথা বলে গর্ভপাতের জন্য চাপ দেন।”
একপর্যায়ে তাকে বুঝিয়ে ধানমণ্ডি গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে নিয়ে গর্ভপাত করানো হয় বলেও জানান অতন্দ্রানু রিপা।

“গর্ভপাতের পর আলী রীয়াজ আমার সঙ্গে সবধরণের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। যোগাযোগের চেষ্টা করলে নেমে আসে মানসিক নির্যাতন ও হুমকি।
“পুলিশ আমাকে হুমকি দিচ্ছে। আমাকে তুলে নিয়ে গুম করার ভয় দেখানো হচ্ছে। আমি ভয়ে ফোন বন্ধ করে বোরখা পরে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। নিজের বাসাতেও থাকতে পারছি না,” কান্না জড়ানো কণ্ঠে বলছিলেন তিনি।
ওই লাইভে অতন্দ্রানু রিপাকে বেশ অসহায় দেখাচ্ছিল।
“আমি সাধারণভাবেই বাঁচতে চাই। আমি পাবলিকলি কোনো কথা বলতে চাইনি, কিন্তু উপায় না পেয়ে আজ বলতে বাধ্য হচ্ছি। আমি তো তার কোনো ক্ষতি করিনি, তাহলে উনি কেন আমাকে স্বাভাবিকভাবে বাঁচতে দিচ্ছেন না?”
এদিকে, ওই ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক আলী রীয়াজের পক্ষ থেকে বিবৃতি দিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।
‘মানহানিকর বক্তব্য প্রচার বিষয়ে অধ্যাপক আলী রীয়াজের বিবৃতি’ শিরোনামে এতে দাবি করা হয়, ওই নারী ভিত্তিহীন ভিডিও বক্তব্য প্রচার করছেন এবং আলী রীয়াজের চরিত্র হননের অপচেষ্টা করছেন।
“অধ্যাপক আলী রীয়াজ ওই নারীকে চেনেন না” দাবি করে বিবৃতিতে বলা হয়, সরকার বিষয়টির দিকে গভীরভাবে নজর রাখছে এবং এই মর্মে ব্যবস্থা গ্রহণ করার বিষয় বিবেচনা করবে।
বার্তায় বলা হয়েছে, “অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানিয়েছেন, তিনি এ বক্তব্য প্রচারকারী নারীকে চেনেন না। তার সঙ্গে যোগাযোগ বা সম্পর্কের বিষয়ে যেসব দাবি করা হয়েছে, তা সর্বৈব মিথ্যা। তিনি আরও জানিয়েছেন, এই ধরনের মিথ্যা বক্তব্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে প্রচার করা হচ্ছে।”
এ ধরনের বক্তব্য অবিলম্বে বন্ধ করার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ।
অন্যথায় এসব মানহানিকর, আপত্তিকর ও চরিত্র হননের অপচেষ্টার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।



