শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর দৃশ্যপটে অনুপস্থিত আওয়ামী লীগ প্রায় ছয় মাস পর হরতাল ও অবরোধের মতো কর্মসূচি দিয়ে রাজনীতির মাঠে ফেরার ঘোষণা দিয়েছে।
১৬ ফেব্রুয়ারি অবরোধ এবং ১৮ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী হরতাল ডেকেছে দলটি, যে কর্মসূচির আভাস দিয়ে সপ্তাহ খানেক আগেই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল দ্য সান ২৪।
মঙ্গলবার রাতে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল দ্য সান ২৪ এর কাছে দলটির কর্মসূচির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
পাশাপাশি আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল ফেইসবুক পেইজেও কর্মসূচি এসেছে।
নাদেল চৌধুরী বলেন, “আগস্টের পর থেকে আমরা কোনো কর্মসূচিতে যাইনি। আমাদের নেতাকর্মীরা অনেক নিপীড়ন, নির্যাতন সহ্য করেছেন। নির্মমভাবে খুন করা হয়েছে। পালিয়ে বেড়াচ্ছেন লাখো নেতাকর্মী। আমরা তাদের সুরক্ষার কথা ভেবে এতদিন মাঠে নামিনি, তবে এভাবে আর চলতে দেওয়া যায় না।”
“আওয়ামী লীগ রাজপথের দল, আমরা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীদের রাজপথেই মোকাবেলা করতে চাই।”
আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল ফেইসবুক পেইজের পোস্টে বলা হয়, দলটির কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া হলে আরও কঠোর কর্মসূচি দেবে দলটি।
ওই পোস্টে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের ‘প্রধানমন্ত্রী’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
এর আগে গত ১০ নভেম্বর শহীদ নূর হোসেন দিবসে রাস্তায় নামার ঘোষণা দিয়ে ব্যাপক প্রতিরোধের মুখে পড়েন দলটির নেতাকর্মীরা।
নাদেল চৌধুরী বলেন, “আমরা অনেক সহ্য করেছি। আমরা দেখতে চাই, এই দুষ্টুচক্র, এই স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠী, আমাদের নেতাকর্মীদের এবার কীভাবে প্রতিহত করে! কতজনকে কারাবরণ করতে হয়! প্রতিরোধ যতোই কঠিন হোক না কেন আমরা প্রস্তুত। জনগণের জন্য যেকোনো ত্যাগ স্বীকার করতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দ্বিধা করেনি, করবে না।
“এ কর্মসূচি শুধু আওয়ামী লীগের কর্মসূচি নয়, এটি জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন। অবৈধ ও অসাংবিধানিক ক্ষমতা দখলকারী খুনি-ফ্যাসিস্ট ইউনূস সরকারের পদত্যাগ ছাড়া আমাদের নেতাকর্মীরা ঘরে ফিরবে না।”
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হয় আওয়ামী লীগ সরকার। এরপর থেকে দলটিকে কার্যত কোনো কর্মসূচি পালন করতে দেওয়া হয়নি। ১৫ আগস্টে শোক দিবস কর্মসূচিতেও বাধা পায় বঙ্গবন্ধুর আদর্শের এই দল।
আওয়ামী লীগ ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, ১ ফেব্রুয়ারি শনিবার থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি বুধবার পর্যন্ত প্রচারপত্র বিলি করবেন দলীয় নেতাকর্মীরা। ৬ ও ১০ ফেব্রুয়ারি জেলা, উপজেলা, ওয়ার্ড ভিত্তিক প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশ করবে দলটি।
১৬ ফেব্রুয়ারি রোববার অবরোধ, ১৮ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা হরতাল কর্মসূচি পালনের ঘোষণা রয়েছে।
আওয়ামী লীগ বলছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনাসহ অন্যদের বিরুদ্ধে হত্যাসহ সকল মামলা প্রত্যাহার এবং ‘প্রহসনমূলক বিচার’ বন্ধ করতে হবে।
অন্তর্বর্তী ইউনূসের সরকারের বিরুদ্ধে মোট ১৩ দফা অভিযোগ এনেছে দলটি:
* আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনাসহ অন্যদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলাসহ অন্যান্য মামলা প্রত্যাহারের দাবি।
* হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টানসহ ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও আদিবাসী জাতি গোষ্ঠীর উপর হামলা ও হত্যাযজ্ঞ এবং বিভিন্ন ধর্মীয় উপসনালয়ে হামলা ও ভাঙচুরের প্রতিবাদ।
* মেটিক্যুলাস ডিজাইনের মাধ্যমে শিশু, ছাত্র-জনতা, পুলিশ বাহিনীর তিন হাজারের বেশি সদস্য এবং আনসার বাহিনীর সদস্যদের হত্যার প্রতিবাদ।
* আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও দেশব্যাপী খুন-ধর্ষণ-চাঁদাবাজি-ডাকাতি-রাহাজানির প্রতিবাদ।
* সারা দেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ব্যক্তিদের গুম, খুন ও হত্যার প্রতিবাদ।
* দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদ।
* মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও কর ফাঁকির মামলা প্রত্যাহার। গ্রামীণ ব্যাংককে ৫ বছরের কর অব্যাহতি প্রদান এবং ভ্যাট-ট্যাক্স বৃদ্ধি করে জনগণের উপর বোঝা চাপানোর প্রতিবাদ।
* সরকারের প্রতিটি খাতে লাগামহীন দুর্নীতি ও বিদেশে টাকা পাচারের প্রতিবাদ।
* শেয়ারবাজারে অর্থ কেলেঙ্কারি, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের প্রতিবাদ।
* সুফিসাধক, বাউল সঙ্গীত শিল্পী, শিল্পী, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, আইনজীবী, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বের উপর আক্রমণ ও শত শত বছর পুরনো মাজারে হামলা ও ভাঙচুরের প্রতিবাদ
* গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন শিল্প-কারখানা বন্ধের ফলে নারী শ্রমিকসহ লক্ষ লক্ষ শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়ার প্রতিবাদ।
* গণ-মামলা, নির্বিচারে গণ-গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ।
* অবৈধ ও অসাংবিধানিক দখলদার খুনি-ফ্যাসিস্ট মুহাম্মদ ইউনূস সরকারের পদত্যাগের দাবি।
দলটির অভিযোগ, অবৈধ উপায়ে মুহাম্মদ ইউনূস ক্ষমতা দখল করেছে। সেই সঙ্গে তার আক্রোশের শিকার হচ্ছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। মানবাধিকার হচ্ছে ভূলুণ্ঠিত; গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হারিয়ে গেছে।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধকে মুহাম্মদ ইউনূস বিসর্জন দিয়েছেন বলেও অভিযোগ আওয়ামী লীগের।
কর্মসূচি বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়ে দলটি বলেছে, “এমতাবস্থায় সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কন্যা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি জননেত্রী শেখ হাসিনার আহ্বানে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দুর্বার গণ-আন্দোলন গড়ে তুলুন।”
এ সম্পর্কিত আরও খবর:
ভারতে আওয়ামী লীগের দফায় দফায় বৈঠক, ফেব্রুয়ারিতে মাঠে নামার প্রস্তুতি
কর্মীদের সুরক্ষায় সময় নিচ্ছে আ.লীগ: সাক্ষাৎকারে নাদেল চৌধুরী