ফ্যাসিবাদী কে? প্রশ্ন শেখ হাসিনার

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজবুর রহমানের বড় মেয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজবুর রহমানের বড় মেয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।

অনলাইনে দেওয়া এক বক্তৃতায় আবেগ জড়ানো কণ্ঠে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণের কাছে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বলেছেন, দেশের মানুষের কাছে তার জিজ্ঞাসা, যারা মানুষ হত্যা করে, যারা ধ্বংসযজ্ঞ চালায়, তারা ফ্যাসিবাদী কি না?

তিনি বলেন, “যারা মানুষের কল্যাণ করে, অন্ন বস্ত্র, বাসস্থানের ব্যবস্থা করে, ঘরে ঘরে আলো জ্বালে, দেশের মানুষকে উন্নত জীবন দেয়, তারা ফ্যাসিবাদী? কারা স্বৈরাচার? এটা দেশের জনগণই বিচার করবেন।”

বুধবার ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে দেওয়া শেখ হাসিনার বক্তব্যটি প্রচারিত হয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে।

তিনি যখন বক্তৃতা দিচ্ছিলেন তখনও বুলডোজার দিয়ে ভাঙা হচ্ছিল ঢাকার ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কে বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত বাড়িটি।

বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, “ওই বাড়িটাকে কেন ভেঙে ফেলা হচ্ছে? কারা ভাঙে, দেশের মানুষের কাছে বিচার চাই।

“হ্যাঁ, আমাদের যে স্মৃতিটুকু নিয়ে দুই বোন বেঁচে ছিলাম, আজকে সেই স্মৃতিটুকু ভেঙে ফেলা হচ্ছে। এর আগে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে, আজকে ভেঙে ফেলছে। হ্যাঁ, একটা দালান ভেঙে ফেলতে পারে, ইতিহাস মুছতে পারবে না।”

সবার অংশগ্রহণে বাংলাদেশ আবারও মাথা তুলে দাঁড়াবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

রাত ৯টায় শুরু করে টানা ৪৭ মিনিটের বক্তব্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন অর্জন যেমন তুলে ধরেন, তেমনি সমালোচনা করেন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ক্ষমতায় অসীন মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের।

তিনি বলেন, “দিন-রাত পরিশ্রম করে, মাত্র ১৫ বছরের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশ করেছি। উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা এনে দিয়েছি, যা আজকে সব ধ্বংস হয়ে গেছে।”

বাংলাদেশের নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে মন্তব্য করে এই বর্বরতার দায় কে নেবে বলে প্রশ্ন রাখেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী।

“এই যে পুলিশ হত্যা, আওয়ামী লীগের প্রায় ৪০০’র মতো নেতাকর্মীকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। হাত কেটে, পা কেটে, গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। ছাত্র, যুবক, মহিলা, কেউ তো ছাড়া পাচ্ছে না। ছেলেকে পায় না বলে মাকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, মাকে গাছের সাথে বেঁধে অপমান করা হচ্ছে, জায়নামাজের উপরে কুপিয়ে মারা অথবা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে। এ কোন ধরনের বর্বরতা?”

তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, “এরা কারা? এরা কি গণহত্যাকারী নয়? এরা কি স্বেচ্ছাচারী নয়?”

বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য মুহাম্মদ ইউনূসকে দায়ী করার পাশাপাশি তাদের দুই বোনকে হত্যা করাও তার ‘মেটিকুলাস ডিজাইনের’ উদ্দেশ্য- এমন অভিযোগও করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।

তিনি বলেন, “তারপরও কীভাবে আল্লাহ আমাদেরকে রক্ষা করেছেন! কাজেই, আবার বাংলাদেশ ফিরে আসবে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে উঠবে। শহীদের রক্ত কখনো বৃথা যেতে পারে না, এটাই আমার কথা।”

ছাত্রলীগকে ব্যান করা প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, “ছাত্রলীগকে ব্যান করেছে। ছাত্রলীগকে ব্যান করার কোনও অধিকার তাদের নেই। কারণ ইউনুস সাহেবের ক্ষমতা দখল সম্পূর্ণ অবৈধ, অসাংবিধানিক। অস্ত্র, অর্থের জোরে মানুষ খুন করে, মানুষের লাশের ওপর পাড়া দিয়ে সে ক্ষমতায় এসেছে।”

বক্তব্যে বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিরুদ্ধে মানুষকে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান সাবেক প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশের মানুষকেও বলব, আপনারাও এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করবেন, প্রতিরোধ গড়ে তুলবেন। বাংলাদেশকে এভাবে ধ্বংস হতে দেবেন না।”

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী আবেগ ঝরা কণ্ঠে বলেন, “আমি আছি আপনাদের পাশে, আমি যতো দূরেই থাকি না কেন, আমার মন আপনাদের সাথে আছে। আর আপনারা আমার মনের ভেতরে আছেন। বাংলার জনগণকে নিয়ে তো সব শোক ভুলেছিলাম, বাংলাদেশের মানুষকেই তো একটা নিজের পরিবার হিসেবে আমি নিয়েছিলাম।”

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনে শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করে মাঠে নামানো হয়েছিল বলে দাবি করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় যে, আমরা দেখি সেই বৈষম্যহীন আন্দোলনের মাধ্যমেই আজকে বৈষম্য সৃষ্টি করা হচ্ছে, ছাত্রদের শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে, শিক্ষকদের অপমান করা হচ্ছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির পরিবেশ নষ্ট করা হচ্ছে। কেন এই অবস্থা থাকবে?“

ছাত্রদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, “আমি ছাত্র সমাজের কাছেও এটা বলবো, যে যারা বিভ্রান্ত করে তোমাদেরকে বিভ্রান্তির পথে নিয়ে গিয়েছিল, ওই সাধারণ ছাত্রদের প্রতি তো আমাদের কোন রাগ নেই, কোন অভিযোগও নেই। কারণ আমি জানি তোমাদের এই বয়সটাই এরকম।”

আরও পড়ুন