বিজ্ঞান সম্পর্কে যাদের ন্যূনতম ধারণা রয়েছে তারা জানেন, পৃথিবী ঘিরে রয়েছে দুই ধরনের মেরু বন্ধনী; ভৌগলিক এবং চৌম্বকীয়। এরমধ্যে ভৌগোলিক উত্তর মেরু হলো যে পয়েন্টে দ্রাঘিমাংশের সমস্ত রেখা মিলিত হয়।
অন্যদিকে চৌম্বকীয় উত্তর মেরু হলো ‘কম্পাস পয়েন্ট’। আর এর পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হচ্ছে পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের রূপ।
নিউজ উইক এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, কয়েক শতক ধরে চৌম্বকীয় উত্তর মেরু কানাডার উত্তর উপকূল বরাবর প্রবাহমান থাকলেও গত কয়েক দশকে তা নতুন পথে ধাবমান।
ভিন্ন গতিতে এখন চৌম্বকীয় উত্তর মেরু আর্কটিক পেরিয়ে রাশিয়ার সাইবেরিয়া অঞ্চলের দিকে ত্বরান্বিত হওয়ায় বিজ্ঞানীরাও বিভ্রান্ত।
পৃথিবীর চৌম্বক মেরুগুলি নড়াচড়া করে কারণ বাহ্যিক কেন্দ্রের তরল ধাতু স্থির থাকার পরিবর্তে চারপাশে গড়াগড়ি করছে, বলছে ‘ফ্যাক্ট চেক’ প্লাটফর্ম স্নোপস।
বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, এই পরিবর্তনের কারণ হতে পারে পৃথিবীর ভূত্বকের নীচে গলিত লোহার প্রবাহের পরিবর্তন; অথবা উচ্চ শক্তি সম্পন্ন সৌর কণার সঙ্গে পৃথিবীর চৌম্বকমণ্ডলের মিথস্ক্রিয়া।
“উত্তর মেরুর এই স্থানান্তর বিশ্ব চৌম্বকীয় মডেলকে প্রভাবিত করছে, যা থেকে অনুমান করা যায়, সময়ের ব্যবধানে মেরুটির কোথায় থাকা উচিত,” লিখেছে টাইমস অফ লন্ডন।
‘স্মার্টফোনে’ থাকা কম্পাসকে দিক চেনাতে এই মডেল কার্যকর ভূমিকা রাখে।
আর্থ ডটকম বলেছে, রাশিয়ার দিকে ধাবমান মেরুরেখা দিক নির্দেশক প্রযুক্তিতে ‘সুদূরপ্রসারী’ প্রভাব ফেলতে পারে।
গবেষকরা বিপরীত ক্ষেত্রের চৌম্বকীয় পরিবর্তনের দিকেও চোখ রাখছেন, যে সময় উত্তর এবং দক্ষিণ মেরু সম্পূর্ণ উল্টে যায়।
পৃথিবীর ভূতাত্ত্বিক ইতিহাসে এমন ঘটনা বহুবার ঘটলেও, আজকের বিশ্বকে তা কীভাবে প্রভাবিত করবে সে সম্পর্কে খুব কমই জানা যায়।
অবশ্য এখন পর্যন্ত চৌম্বকীয় দক্ষিণ মেরু উত্তর মেরুর তুলনায় খুব কম সরেছে। উত্তর মেরু এক দশকে যতোটা সরেছে দক্ষিণ মেরু গেল শত বছরে প্রায় একই দুরত্ব অতিক্রম করেছে।
গবেষকরা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে একসময় মেরুগুলো তাদের অবস্থান বদলিয়ে নেবে, আর যে কারণে ব্যাহত হবে চৌম্বক ক্ষেত্র, ক্ষতিকারক বিকিরণের সংস্পর্শে আসার আশঙ্কাও ফেলে দেওয়া যায় না।
দ্য উইক অবলম্বনে