যুক্তরাষ্ট্রকে সর্বোচ্চ ছাড়ে কতটা শুল্ক সুবিধা পাবে বাংলাদেশ?

প্রতীকী ছবি।
প্রতীকী ছবি।

ভিয়েতনামের আদলে মার্কিন পণ্যে শূন্য শুল্ক সুবিধা দিতে বাংলাদেশের আপত্তি না থাকলেও এর পাল্টা হিসেবে কেমন ছাড় পাওয়া যাবে সে জবাব এখনও মেলেনি। অবশ্য স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে সর্বোচ্চ সুবিধা পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী তৈরি পোশাক খাতে ভিয়েতনামের প্রতিদ্বন্দ্বী দেশটি।

বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমানের ভাষ্যেও এমন ধারণা পাওয়া গেছে। তিনি বলেছেন, মার্কিন পণ্যে শুল্ক ছাড় দিতে বাংলাদেশের তেমন একটা আপত্তি নেই।

তিনি বলেছেন, “আমরা এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিমান, এলএনজি ও গমসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছি। শুল্ক তুলে দিলে বেসরকারি খাতও যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বাড়াতে উৎসাহিত হবে। এতে দেশীয় শিল্পে কোনো ক্ষতি হবে না।”

মার্কিন প্রশাসন ইতোমধ্যে ভিয়েতনামের ওপর শুল্ক হার ৪৬% থেকে ২০%-এ নামিয়ে এনেছে, যা বাংলাদেশকেও আশাবাদী করে তুলেছে।

তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত খসড়া চুক্তিতে থাকা ‘যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ আইন মেনে চলা’র শর্ত মানতে বাংলাদেশ অপারগতা জানিয়েছে। বাংলাদেশের অবস্থান হলো, এই চুক্তি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী স্বাক্ষরিত হতে হবে।

সচিব আরও বলেন, “আমরা তাদের জানিয়েছি যে, তাদের শর্ত মেনে চলা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তবে পারস্পরিক বাণিজ্যিক সুবিধার জন্য আলোচনায় আমরা উভয়পক্ষই আন্তরিক। ডব্লিউটিও-এর নিয়ম অনুযায়ী আমরা একটি চুক্তিতে যেতে আগ্রহী।”

যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত পারস্পরিক শুল্ক চুক্তি (রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ অ্যাগ্রিমেন্ট) নিয়ে চূড়ান্ত সমঝোতায় পৌঁছাতে গত ৩ ও ৪ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশ প্রতিনিধিদের। সেই বৈঠকে অংশ নিতে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন।

এর আগে গত ২৬ জুন ইউএসটিআরের সঙ্গে অনুষ্ঠিত সভায় বাংলাদেশের ওপর সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ কর আরোপের অনুরোধ করে বাংলাদেশ যেসব প্রস্তাব দিয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্র সেগুলো গ্রহণ করেনি বলে জানা গেছে।

মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি বাংলাদেশকে জানিয়েছে, তারা স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য পৃথক শুল্কহার নির্ধারণ করবে। ফলে ভিয়েতনামের তুলনায় বাংলাদেশের জন্য শুল্কহার আরও কম হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।

সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, “আমরা বাণিজ্য, রপ্তানি এবং বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতের স্বার্থ রক্ষা করেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নিচ্ছি।”

গত ২ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর পারস্পরিক শুল্ক আরোপ করে, যার আওতায় বাংলাদেশের ওপর ৩৭% শুল্ক নির্ধারণ করা হয়। অবশ্য পরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ওই শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত করেন। এ সময়ের মধ্যে বেশ কয়েকটি দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছেছে।

বাণিজ্যসচিব আশ্বস্ত করেছেন ৯ জুলাই শুল্ক স্থগিতের মেয়াদ শেষ হলেও বাংলাদেশে নতুন করে শুল্ক আরোপ না হওয়ার সম্ভাবনা বেশি, কারণ আলোচনা এখনো চলমান।

তিনি বলেন, “আমরা এই বিষয়ে ইউএসটিআর-এর সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তারা জানিয়েছে, আলোচনা চলমান থাকায় আপাতত এই শুল্ক কার্যকর হবে না।”

এদিকে, ৩ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, বাংলাদেশকে একটি সংযুক্তি পাঠাবে যুক্তরাষ্ট্র, যার ভিত্তিতে আলোচনা এগোবে। তবে শনিবার পর্যন্ত এই সংযুক্তি আসেনি।

বাণিজ্য সচিব বলেন, “আমরা এখন পর্যন্ত শুধুই বর্ণনামূলক দিক নিয়ে আলোচনা করেছি। সংযুক্তি হাতে পাওয়ার পরই টেকনিক্যাল কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাব।”

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, এই চুক্তি বাংলাদেশের চলমান মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি বা অগ্রাধিকার বাণিজ্য চুক্তির মতো নয়। সাধারণত, চুক্তির সংযুক্তি ও অফার আগে চূড়ান্ত করা হয়, তারপর বর্ণনামূলক অংশ নিয়ে আলোচনা হয়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র উল্টোভাবে আলোচনা শুরু করেছে।

আরও পড়ুন