ভার্চুয়াল মাধ্যমে শেখ হাসিনার বক্তব্য ধরে বাংলাদেশে তোলপাড়, ভারতের কূটনীতিককে তলবের মধ্যে রাজ্যসভায় প্রশ্ন উঠল- শেখ হাসিনাকে ঢাকায় পাঠানোর কোনো সিদ্ধান্ত দিল্লি নিয়েছে কি না?
ভারতের পার্লামেন্টের উচ্চ কক্ষে কেরালার সিপিএম সদস্য জন ব্রিট্টাস দিল্লিতে আশ্রয় পাওয়া বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে সরকারের কাছে প্রশ্ন রাখেন।
বৃহস্পতিবার সরকারের পক্ষে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কীর্তি বর্ধন সিংহ এর জবাব দেন বলে কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকা জানিয়েছে।
বাংলাদেশ শেখ হাসিনাকে ফেরত চাইছে বলেই নরেন্দ্র মোদী সরকারের অবস্থান কী, তা জানতে চাইছিলেন পম্চিমবঙ্গের প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর দলের নেতা জন ব্রিটাস।
তিনি তিনটি প্রশ্ন করেন-
১. বাংলাদেশ কি তাদের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী হাসিনার প্রত্যর্পণ চেয়েছে?
২. যদি তা-ই হয়, তবে প্রত্যর্পণের জন্য কী কী কারণ দেখিয়েছে?
৩. ভারত সরকার এ সম্পর্কে কী জবাব দিয়েছে ঢাকাকে?
এই প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী কীর্তি বর্ধন যে জবাব দিয়েছেন; তাতে স্পষ্ট দীর্ঘদিনের বন্ধু শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর কোনো ইচ্ছাই ভারত সরকারের নেই।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ হাসিনার প্রত্যর্পণ দাবি করেছে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট হাসিনা ভারতে আসার আগে বাংলাদেশে যে যে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, তার ভিত্তিতে এই প্রত্যর্পণ দাবি করা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ সরকারের কাছে এ বিষয়ে কোনো জবাব এখনও পাঠানো হয়নি।”
জুলাই আন্দোলনের সময় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের বিচারের উদ্যোগ নেওয়ার পর গণহত্যার অভিযোগে আদালতের কাঠগড়ায় শেখ হাসিনাকে দাঁড় করাতে চাইছে মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সেজন্য তাকে ফেরত চেয়ে গত ডিসেম্বরে ভারত সরকারকে একটি চিঠি দিয়েছিল বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
তখন ওই চিঠির প্রাপ্তিস্বীকার করলেও দুই মাসেও কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি নয়া দিল্লি। কূটনৈতিক সূত্রের বরাতে আনন্দবাজার পত্রিকা লিখেছে, আগে ওই চিঠির বৈধতা যাচাই করতে চায় নয়া দিল্লি। কারণ কোনো দেশের অন্তর্বর্তী সরকার অন্য রাষ্ট্রের নির্বাচিত সরকারের কাছে কোনও রাজনৈতিক নেতার প্রত্যর্পণ চাইলে আইনি দিকগুলি খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন শেখ হাসিনা। তখন বিজেপি সরকার সর্বদলীয় বৈঠক ডেকে প্রতিবেশী দেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রীকে আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।
শেখ হাসিনার থাকার জন্য নয়া দিল্লির লোধি গার্ডেনের লুটেনস বাংলো জোনে একটি সুরক্ষিত বাড়ির ব্যবস্থা করেছে ভারত সরকার। তিনি সেখানে আছেন এবং মাঝে-মধ্যেই ভার্চুয়ালি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে বক্তব্য দিচ্ছেন।
বুধবার শেখ হাসিনার এমন এক বক্তব্য দেওয়া নিয়ে বাংলাদেশে অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদাতা ছাত্ররা ক্ষুব্ধ হয়ে ঢাকায় বঙ্গবন্ধু ভবন গুঁড়িয়ে দেয়। সেই সঙ্গে সারাদেশে আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়িতে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
এই ভাংচুর-আগুন ঠেকানোর কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে ইউনূস সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার উসকানির কারণেই এই অনভিপ্রেত ও অপ্রত্যাশিত ঘটনাগুলো ঘটেছে।
এরপর পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন ঢাকায় সাংবাদিকদের বলেন, ভারতে থেকে শেখ হাসিনা উস্কানিমূলক বিবৃতি দিচ্ছেন। এর ফলে বাংলাদেশের শান্তি বিঘ্নিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, “শেখ হাসিনা ভারতে থেকে যে সমস্ত বক্তৃতা-বিবৃতি দিচ্ছেন, সেটাকে ছাত্র-জনতা ভালোভাবে নেয়নি। তিনি অবিরাম প্রোভোক (উসকানি) করতেছেন। তারই ফলশ্রুতিতে এ ঘটনাটা ঘটতেছে বলে আমাদের বিশ্বাস।”
ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় উপ হাই কমিশনারকে তলবও করা হয় বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। শেখ হাসিনার মুখ বন্ধ রাখার জন্য ভারতকে লিখিতভাবে অনুরোধও জানানো হয়।
উপদেষ্টা তৌহিদ বলেন, “আজ আবারও তাদেরকে আমরা গত কয়েক দিনের পরিস্থিতির জন্য প্রোটেস্ট নোট দিয়েছি। হাইকমিশনার এখন নেই, তাই অ্যাকটিং হাইকমিশনারকে ডেকে এ ধরনের প্রোভোক করার প্র্যাকটিসটা বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করেছি।”
এই প্রতিবাদপত্র দেওয়ার কথা উপদেষ্টা জানানোর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আবার ভার্চুয়াল এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন শেখ হাসিনা। যার মানে দাঁড়ায়, ঢাকার আপত্তি আমলেই নিচ্ছে না দিল্লি।