কুমিল্লায় যৌথবাহিনী নিয়ে গেল সুস্থ মানুষ, পরিবার ফিরে পেল লাশ

চার সন্তানের জনক তৌহিদুল ইসলাম।
চার সন্তানের জনক তৌহিদুল ইসলাম।

কুমিল্লায় যৌথ বাহিনীর ‘নির্যাতনে’ এক ব্যক্তির মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে, যিনি সদরের একটি ইউনিয়নের যুবদলের আহ্বায়ক ছিলেন।

কুমিল্লা কোতয়ালি মডেল থানার ওসি মাহিনুল ইসলাম জানিয়েছেন, ওই ব্যক্তির নাম তৌহিদুল ইসলাম। তিনি কুমিল্লা সদর উপজেলার পাঁচথুবী ইউনিয়নের ইটাল্লা গ্রামের মোখলেছুর রহমানের ছেলে।

তৌহিদুল চট্টগ্রাম বন্দরে একটি শিপিং এজেন্টে চাকরি করতেন। বাবার মৃত্যুর খবর পেয়ে বাড়িতে এসেছিলেন।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তৌহিদুল ইসলামের বড় ভাই আবুল কালাম আজাদ টিপু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বৃহস্পতিবার রাত ২টার দিকে তৌহিদুলকে যৌথবাহিনীর সদস্যরা বাড়ি থেকে তাকে আটক করে নিয়ে যায়।”

“শুক্রবার বেলা ১২টার দিকে পুলিশ তাদের ফোন দিয়ে হাসপাতালে যেতে বলে। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে আমার ভাইয়ের লাশ দেখতে পাই।”

তৌহিদুলের শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল বলেও জানান তিনি, যা চিকিৎসকও নিশ্চিত করেছেন।

আরেক ভাই সাদেকুর রহমান প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে তারা বাবার কুলখানির আয়োজন নিয়ে কাজ করছিলেন। রাত আড়াইটার দিকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা বাড়িতে আসেন। তাদের সঙ্গে পুলিশের পোশাক পরা কাউকে দেখেননি, তবে সাদা পোশাকে পাঁচজন যুবক ছিলেন। বাড়িতে ঢুকেই তারা তৌহিদুলকে আটক করেন। এরপর সবার কাছ থেকে মুঠোফোন কেড়ে নেন। ঘরে ব্যাপক তল্লাশি করেন। তবে কিছু পাননি। তৌহিদুলকে আটকের কারণ জিজ্ঞস করলেও তারা কোনো উত্তর দেননি। একপর্যায়ে তাকে গাড়িতে করে নিয়ে যান।

শুক্রবার সকালে আবারও সেনাবাহিনীর সদস্যরা বাড়িতে এসে ব্যাপক তল্লাশি করেন উল্লেখ করে সাদেকুর রহমান বলেন, তখনো কিছু পাননি। সকালেও তৌহিদুল তাদের গাড়িতে ছিলেন। কিন্তু তাকে গাড়ি থেকে নামানো হয়নি। দূর থেকে তাকে নিস্তেজ মনে হচ্ছিল।

তিনি আরও জানান, হাসপাতালে গিয়ে তারা তৌহিদুলের সারা শরীরে জখমের চিহ্ন দেখতে পেয়েছেন।

“তার কোমর থেকে পায়ের নিচ পর্যন্ত এমনভাবে পিটিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে যে কালো ফোলা জখমের চিহ্ন রয়েছে। পেট, বুক, পিঠ, পা, গলাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে শুধুই নির্যাতনের চিহ্ন।”

চার মেয়ের সঙ্গে তৌহিদুলের স্ত্রী ইয়াসমিন নাহার।

কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা যুবদলের সদস্য সচিব ফরিদ উদ্দিন শিবলু বলেন, “অতিরিক্ত মারধরের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে বলে আমরা ধারণা করছি। যতদূর জানি তৌহিদুলের বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। পুলিশও কিছু বলছে না। তিনি অত্যন্ত ভালো মানুষ ছিলেন। তার এমন মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না।”

কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার তানভির আহমেদ বলেন, “শুক্রবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে পুলিশ তৌহিদুল ইসলামকে জরুরি বিভাগে নিয়ে আসে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে দেখা যায়, হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। তার শরীরে বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।”

অপ্রাপ্ত বয়স্ক চার মেয়ের বাবা তৌহিদুল। বাড়িতে গিয়ে সাংবাদিকরা দেখতে পান তাদের মা ইয়াসমিন নাহারকে জড়িয়ে ধরে তারা বাবার জন্য কাঁদছে।

ওসি মাহিনুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেছেন, “যৌথ বাহিনী আমাদের শুক্রবার বেলা ১১টায় জানায়, গোমতী নদীর পাড় সংলগ্ন ‘গোমতী বিলাসে’ একজন আহত অবস্থায় আছে। পরে সেখান পুলিশ তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।”

ময়নাতদন্ত শেষে সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে তার মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে এবং এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে বলে জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ads