সোনালী অক্ষরে ‘ওয়ার্ল্ডস বেস্ট রাইস’ লেখা একটি সুন্দর কালো বাক্স হাতে নিয়ে জাপানি শেফ কেনইচি ফুজিমোতো মাথাটা একটু কাত করে হাসলেন—তার মুখে তখনও এক ঝলক সংশয়ের আভা।
রান্নাঘরে ফুটতে থাকা ভাতের হাঁড়ির দিকে ইঙ্গিত করে ফুজিমোতো বললেন, “এ ধরনের জিনিস সাধারণত খুব বাণিজ্যিক হয়, তবে ভালো না-ও হতে পারে।”
হংকং-ভিত্তিক শেফ ও সুশি ফুজিমোতো রেস্তোরাঁর মালিক কেনইচি ফুজিমোতো। দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে নামকরা সুশি শেফদের অধীনে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। যাদের সাথে তিনি কাজ করেছেন তাদের অনেকেই মিশেলিন-তারকা খেতাবপ্রাপ্ত সুশি শেফ। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের চাল ফুজিমোতো ব্যবহার করেছেন, যদিও এরকম কিছু আগে কখনও তার দেখা হয়নি।
মজার ব্যাপার হলো শুধু কিনমেমাই প্রিমিয়াম চালের উৎপাদকেরাই বলছেন, এটি যে বিশ্বের শুধু সেরা চাল তা কিন্তু নয়! ২০১৬ সালে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসও কিনমেমাই প্রিমিয়াম চালকে বিশ্বের সবচেয়ে দামি চালের স্বীকৃতি দিয়েছে।
একজন জাপানি শেফের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা। “চাল হলো জাপানের আত্মার খাদ্য,” বলেন ফুজিমোতো। “সুশির ক্ষেত্রে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো চাল— ভালো সুশির ৮০ শতাংশ নির্ভর করে চালের ওপর এবং বাকি ২০ শতাংশ মাছের ওপর,” সিএনএনকে বলছিলেন তিনি।
ঘড়ির কাঁটা-ই দেখিয়ে দেবে আসল সত্যটা। “আর ১৫ মিনিটের মধ্যেই আমরা জানতে পারব,” বলেন তিনি।
বছরে উৎপাদন মাত্র ১,০০০ বক্স
প্রায় তিন হাজার বছর ধরে জাপানে ধান বা চালকে পবিত্র এবং প্রধান খাদ্য হিসেবে গণ্য করা হয়। বর্তমানে দেশজুড়ে ৩০০টিরও বেশি প্রজাতির ধান চাষ করা হয়, এবং নতুন নতুন জাত উদ্ভাবনের কাজ অব্যাহত রয়েছে।
জাপানি চাল দিয়ে তৈরি খাবার ও পানীয় যেমন সুশি, মোচি কেক এবং সাকে সাম্প্রতিক দশকগুলোতে আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেছে।
তবে চাল রপ্তানিতে জাপান কখনো সেই একই মাত্রার সাফল্য অর্জন করতে পারেনি।
প্রায় ৬০ বছর ধরে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক বাজারে চাল উৎপাদন ও বিপণন নিয়ে কাজ করছে জাপানের টয়ো রাইস কর্পোরেশন। প্রতিষ্ঠানটির ৯১ বছর বয়সী বর্তমান চেয়ারম্যান কেজি সাইকা। ২০১৬ সালে তিনি সিদ্ধান্ত নেন, নিজের হাতেই বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেবেন জাপানের এই প্রধান খাদ্যশস্য।
ধান চাষ ও মিলিং মেশিনেরই মূলত ব্যবসা জাপানের ওাকায়ামা ভিত্তিক এই কোম্পানির। তবে, ‘কিনমেমাই’ নামের ধানের এই জাত নিয়েও তারা কাজ করে। ’কিনমেমাই’ মানে হলে ’সোনালী কুঁড়ির ধান’। পুষ্টিগুণ ও স্বাদের কারণে পৃথিবীব্যাপী বিশেষ কদর এই চালের।

“আমার মনে হলো জাপানের ধানের গুণগতমান সম্পর্কে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আরও ভালোভাবে পরিচয় করানো প্রয়োজন,” বলেন সাইকা।
তবে কঠিন চ্যালেঞ্জ আছে। সে টি কী? কোম্পানির বিপণন বাজেট অতিরিক্ত না বাড়িয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে খ্যাতি বাড়ানো।
“তখনই আমার মনে এলো গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের কথা। আমাদের মনে হলো আমাদের এমন কিছু করতে হবে যা আগে কখনো করা হয়নি।”
বিশ্বের সবচেয়ে সুস্বাদু চাল উৎপাদনকারী হিসেবে আত্মবিশ্বাস নিয়ে সাইকা সেই বছরই বাজারে আনেন ‘কিনমেমাই প্রিমিয়াম’। ২০১৬ সালে ৮৪০ গ্রাম ওজনের এক বক্স চাল বিক্রি করা হয় ৯,৪৯৬ জাপানি ইয়েনে, যা কেজি প্রতি প্রায় ১০৯ মার্কিন ডলারের সমান।
“যখন বাজারে কেজি প্রতি মাত্র ৩০০ থেকে ৪০০ ইয়েনে চাল পাওয়া যায়, তখন আমি ভেবেছিলাম কেউ কি এটি কিনবে? আশ্চর্যজনকভাবে, মানুষের আগ্রহ জন্মালো। তারা যোগাযোগ করতে শুরু করলেন,” তিনি বলেন।
যা শুরু হয়েছিল কেবল একবারের জন্য, অব্যাহত চাহিদার কারণে এখন তা বাৎসরিক লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে উৎপাদিত হচ্ছে। এই বছর, কিনমেমাই প্রিমিয়ামের একটি বক্স বাজারে এসেছে। দাম ১০,৮০০ ইয়েন, যা প্রায় ৭৩.৪ মার্কিন ডলার।
সীমিত পরিমাণে উৎপাদন করায় ২২ আগস্ট বাজারে আসার পরপরই দ্রুত বিক্রি হয়ে যায়।
মুনাফা নেই তেমন একটা
২০২৬ সালে টয়ো রাইস প্রকল্পের ১০ম বার্ষিকী উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছে কোম্পানিটি। এই সময় এসে সাইকা জোর দিয়ে বলছেন যে, এই দামি চালে লাভ করা কখনোই তার পরিকল্পনার অংশ ছিল না।
তিনি বলেন “সত্যি বলতে, খরচ হিসাব করলে আমরা সম্ভবত লোকসানে আছি। যদিও আমরা এটি উচ্চমূল্যে বিক্রি করি, তবুও এটি লাভজনক নয়।”
তার মতে, বরং এই উদ্যোগের লক্ষ্য ছিল জাপানি চালের খ্যাতি বাড়ানো এবং কৃষকদেরকে উচ্চমানের চালের জাত চাষে উৎসাহিত করা। এই চালকে ‘বিশ্বের সেরা চাল’ হিসেবে বিশ্বদরবারে উপস্থাপনই ছিল সাইকার মূল উদ্দেশ্য। জাপানি চালের জনপ্রিয়তা বাড়াতে এমন আরও বেশ কিছু উদ্দোগই নিয়েছে টয়ো রাইস কর্পোরেশান।
১৯৭০-এর দশকে তিনি পানি সাশ্রয়ের জন্য ধোয়া ছাড়াই রান্না করা যায় এমন চাল উদ্ভাবন করেছিলেন। প্রায় দুই দশক আগে, তার কোম্পানি এমন একটি মিলিং মেশিন তৈরি করে যা চালের উপরে থাকা আবরণের ১৬টি স্তরের পরিবর্তে ৯টি স্তর দূর করে। এর ফলে চালের পুষ্টি ও স্বাদ অক্ষুণ্ণ থাকে।
কিন্তু গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড অটুট রাখার জন্য কিনমেমাই প্রিমিয়াম প্রস্তুত করার প্রক্রিয়াটি আরও অনেক জটিল।
জাপানে চাল নিয়ে প্রতি বছর বিভিন্ন ধরনের প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। এমনই একটা প্রতিযোগিতার নাম হল ‘ইন্টারন্যাশনাল কনটেস্ট অন রাইস টেস্ট ইভ্যালুয়েশন। চালের স্বাদ মূল্যায়নকারী সংস্থা ‘শোকুমি কান্তেইসি’ এই প্রতিযোগিতা আয়োজন করে।
এই প্রতিযোগিতায় প্রতিবছর প্রদর্শিত হয় পাঁচ হাজারের বেশি জাতের চাল। সেখান থেকে থেকে চার থেকে ছয়টি শীর্ষস্থানীয়, পুরস্কারপ্রাপ্ত চালের জাত নির্বাচন করেন সাইকা।
শুধু স্বাদ কিংবা গঠন নয় বরং প্রতিটি চালের প্রজাতির এনজাইমের মাত্রাও পরীক্ষা করেন সাইকা।
“এনজাইম ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমে চালের প্রাণশক্তি বা জীবন শক্তি,স্পষ্টভাবে শনাক্ত করা যায়। কিনমেমাইর মত এমন শক্তিশালী প্রাণশক্তিযুক্ত চাল সত্যিই অসাধারণ,” তিনি বলেন।
সবচেয়ে বেশি প্রাণশক্তি আছে এমন চালই বাছাই করা হয়। এর পরে মূলত বিবেচনা করা হয় চালের বয়স।
“চালকে কয়েক মাস রেখে দিলে এর ঘ্রাণ আরও ভাল হয়। স্বাদ হয় আরও সমৃদ্ধ, আর স্বাস্থ্যগত উপকারিতাও বেড়ে যায়। তাই এই চাল সত্যিই বিশেষ কিছু,” বলেন সাইকা।
কিনমেমাই প্রিমিয়াম চালের উৎপাদন প্রক্রিয়া বেশ জটিল। অনেক বেশি যত্ন নিতে হয়। সেকারণে খরচটাও পড়ে যায় বেশি। তাই বিলাসবহুল উপহার হিসেবে সাধারণত এই চাল দেওয়া হয়। বিশেষ অনুষ্ঠান উদযাপন বা করপোরেট অতিথিদের মুগ্ধ করার জন্য এই চাল ব্যবহার করা হয়।
যে সব চাষীদের চাল ‘বিশ্বের সেরা চাল’ প্রকল্পের জন্য নির্বাচিত হয় তাদেরকে নিয়ে আসা হয় টোকিওতে। সেখানে থাকে জমকালো আয়োজন।
“এতে সবাই ভীষণ গর্ব অনুভব করে,” বলেন সাইকা। “এটা একধরনের অপ্রত্যাশিত ফলাফল। কিন্তু চাল উৎপাদকরা প্রতি বছর সেই লক্ষ্য অর্জনের জন্য কঠোর পরিশ্রম করেন। কারণ যখন তারা সেটা করতে পারেন, স্থানীয় সংবাদপত্রগুলোতে বড় করে প্রকাশিত হয় যে, তাদের চাল ‘বিশ্বের সেরা চাল’ হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে।”
এই বছরের কিনমেমাই প্রিমিয়ামে ব্যবহৃত হয়েছে চার ধরনের চালের মিশ্রণ- গিফু ও নাগানো প্রদেশের দুই জাতের কোশিহিকারি চাল এবং দুই জাতের ইউদাই ২১ চাল।
ক্ষুধাই কাজের প্রেরণা
চালের প্রতি সাইকার এই গভীর অনুরাগের সূত্রপাত তার শৈশব থেকেই। ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর জাপান ভয়াবহ খাদ্যসংকটে পড়েছিল।
সেসময় শক্তিশলী টাইফুন মাকুরাজাকি জাপানে আঘাত হানলে বিপুল পরিমাণ কৃষিজমি নষ্ট হয়।
”অনেক মানুষ অনাহারে মারা গিয়েছিল। এমনকি বিচারকসহ উচ্চপদস্থ ও অভিজাত শ্রেণির মানুষও রক্ষা পায়নি,” সেই ঘটনা মনে করে বলেছিলেন সাইকা।

তখন বেঁচে থাকার জন্য একটি কৌশল অবলম্বন করে সাইকার পরিবার। যেখানে যেভাবে পেরেছে তারা বীজ বপন করেছে। মাছ ধরেছে, পাখি শিকার করেছে। এই অভিজ্ঞতাই সাইকার মনে ধানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা আর উন্নত মানের চাল উৎপাদনের দৃঢ় সংকল্প সৃষ্টি করে।
তার কাছে, কিনমেমাই প্রিমিয়াম হলো সেই আবেগের প্রতীক। তবে, এই চালের সরবরাহ অতি সীমিত।
“প্রতি বছর একবারই খাই, যখন তারা আমাকে সেই বছরের ধানের স্বাদ নেওয়ার জন্য বলে। খুব সামান্যই,” তিনি বলেন।
“কোম্পানির ইন-হাউস সুশি রেস্তোরাঁর প্রধান শেফ হিরোশি মাত্সুমোতো বলেন, প্রথমবার চালটি চেখে দেখার পর তিনি তাত্ক্ষণিকভাবেই এর ভক্ত হয়ে যান।”
“আমার মনে আছে, এটা এত সুস্বাদু ছিল যে এক বাটি আমার জন্য যথেষ্ট ছিল না আমি আরও একটি বাটি খেতে চাইলাম।” তারপরও তিনি এটিকে সুশির সঙ্গে পরিবেশন করেন না।
“গরম অবস্থায় পরিবেশন করা সবচেয়ে ভাল। তবে সেটি একটি সেট মিলের অংশ হিসেবে,” তিনি বলেন।
স্বাদ পরীক্ষা
ফুজিমোতোর রান্নাঘরে টয়ো রাইস থেকে উপহার হিসেবে পাওয়া কিনমেমাই প্রিমিয়াম রান্না করে ভাপে রাখা হয়েছে।
সাধারণত, নতুন চালটি বেশ কয়েকবার পরীক্ষামূলকভাবে রান্না করা হয়। কতক্ষণ ভিজিয়ে রাখতে হবে, কী পরিমাণ পানি মেশাতে হবে রান্নার তাপমাত্রা কেমন হবে— এসব পরীক্ষা থেকে বোঝার চেষ্টা করা হয়।
ফুজিমোতো চালটি মাত্র এক সেকেন্ড ধুয়ে ৩০ মিনিট ভিজিয়ে রেখেছিলেন। এরপর সেটিকে রান্নার পাত্রে রেখেছিলেন।
তার প্রাথমিক মূল্যায়ন? “চমৎকার, স্বচ্ছ রঙ। আমার ভালো লেগেছে।” তার স্ত্রী আই-এর মন্তব্য? “ওহ! চকচক করছে!”
“একেবারে হীরার মতো” যোগ করেন ফুজিমোতো। “প্রতিটি দানা আলাদা করে দেখা যায়, যা সাধারণত ভালো মানের চালের ক্ষেত্রেই সম্ভব। আকার সুন্দর, আর ঘ্রাণ সুন্দর, স্নিগ্ধ। অতিরিক্ত কড়া নয়।”
স্বাদ নেওয়া হলে, তিনি তার মত প্রকাশ করেন।
“স্বাদ সুন্দরভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ। গঠন চমৎকার। এতে যথাযথ আর্দ্রতা আছে। এই ভাত সবারই ভালো লাগবে।”
তিনি কি তার রেস্তোরাঁর জন্য সেই চাল কিনতে চান? “না, না, না। এটা অনেক দামি— আমাদের দাম তিনগুণ বাড়াতে হবে,” হাসতে হাসতে বলেন তিনি।
টয়োর ইন-হাউস শেফের মতো, তিনি বিশ্বাস করেন এই চালের ভাত সাধারণভাবে পরিবেশন করা আরও ভালো, বিশেষ করে কাইসেকি রেস্টুরেন্টে, যেখানে ঐতিহ্যবাহী রুচিশীল খাবার পরিবেশন করা হয়। “আমার মনে হয় এই চাল সুশির জন্য উপযুক্ত নয়। ভিনেগারের সঙ্গে মিশালে এটি নরম বা লেপ্টে যেতে পারে,” তিনি বলেন।
হংকংয়ের ফ্লাওয়ার ড্রাম এবং লাই’স কিচেনসহ বেশ কয়েকটি রেস্তোরাঁর মালিক শেফ নানসেন লাই। লাই’স কিচেনের বিশেষত্ব হলো ক্লে পট রাইস (মাটির হাঁড়িতে রান্না করা ভাত। কিনমেমাই প্রিমিয়ামের সাথে তিনি তুলনা করেছেন তার নিজস্ব ব্যবহৃত আরেক জাতের চালের যেটি থাই সুগন্ধি চাল এবং জাপানের নিইগাটার কুশিহিকারি চালের মিশ্রণ।
তিনি বলেন, “এটি দেখতে তুলনামূলকভাবে আরও বেশি আঠালো দেখায় এবং থাই চালের মতো শক্তিশালী সুগন্ধ নেই। এবং এটি মূলত থাই এবং জাপানি চালের মধ্যে স্বাভাবিক পার্থক্য।”
মুখে একটা লোকমা তুলে লাই বললেন “এর স্বাদ দারুণ, আমাদের চালের তুলনায় অনেক বেশি জটিল স্বাদ এবং ঘ্রাণ রয়েছে।”
“একজন রেস্তোরাঁ মালিকের দৃষ্টিকোণ থেকে, আমরা এ ধরনের চাল কেনার সামর্থ্য রাখি না। আমাদের আরও একটু শক্ত চাল দরকার, যেমন থাই রাইস, যা কড়া সসের সাথে খাওয়া হয়। তবে এই চাল এত স্বাদযুক্ত যে সাধারণভাবেই খাওয়া যায়।”
লাই ও ফুজিমোতো—দুজনই একমত যে, টয়ো রাইসের এই প্রকল্প চাষিদের উৎসাহ দিতে একটি কার্যকর উপায়।
ফুজিমোটো বলেন, “ধান চাষীরা কঠিন সময় পার করছেন। যন্ত্রপাতি এবং জ্বালানি খরচ বাড়লেও, গত ৩০–৪০ বছরে চালের দাম প্রায় অপরিবর্তিত রয়েছে। খুচরা মূল্য বাড়ানো হলেও তার সুবিধা ভোগ করতে পারেন না সাধারণ চাষীরা। চাল চাষ করে যদি তারা জীবিকা নির্বাহ করতে না পারেন, নতুন প্রজন্ম কিন্তু এই দিকে আকৃষ্ট হবে না।”
ভবিষ্যতে কী হবে
৯১ বছর বয়সেও সাইকা এখনও কর্মঠ। প্রতিদিনই অফিসে যান। “আজ আমি স্যুট পরেছি, কিন্তু সাধারণত আমি কারখানায় কাজের পোশাকে থাকি, বিভিন্ন কাজ করি,” তিনি বলেন।
“প্রবীণদের অনেকেই সুস্থ আছেন। তাদের বেশিরভাগই কারাওকে যান, গলফ খেলেন বা ব্যায়াম করেন, কিন্তু খুব কম মানুষই কোম্পানিতে আসেন।”

তার সুস্থ থাকার রহস্য? অবশ্যই ভাত। চালের প্রতি তার আবেগই তাকে কাজ চালিয়ে যেতে অনুপ্রাণিত করে।
“এই বয়সে এসেও আমি আমার নিজের ও কোম্পানির উন্নয়নের দিকে মনোযোগ দিই, তবে আমার সবচেয়ে বড় চিন্তা জাপানের ভবিষ্যৎ,” তিনি বলেন।
“আমি জানি না আরও কত বছর বাঁচব, কিন্তু সেই সময়ের মধ্যে আমি এমন কিছু তৈরি করতে চাই যা সমাজের জন্য উপকারী হবে। আমার সময় বেশি নেই, তাই প্রতিদিনই ব্যস্ত থাকি,” তিনি বলেন।
সিএনএন অবলম্বনে এম এস রহমান



