অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করলেন মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া। তারা পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এই দুই জনের মধ্যে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন মাহফুজ এবং স্থানীয় সরকারের দায়িত্বে ছিলেন আসিফ।
সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় যমুনায় সংবাদ সম্মেলন করে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, “বিকাল ৫টায় যমুনায় পদত্যাগপত্র জমা দেন দুই উপদেষ্টা। নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণার সাথে সাথে তাদের পদত্যাগ কার্যকর হবে।”
উপদেষ্টার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে চাঁদাবাজি, ঘুষ কেলোঙ্কারি, রাষ্ট্রীয় সফরকালে অস্ত্র বহন এবং প্রভাব বিস্তারসহ নানা অভিযোগ ওঠে ছাত্র থেকে সরাসরি রাষ্ট্রের উপদেষ্টা বনে যাওয়া আসিফের নামে।
তার একান্ত সহকারীর শত কোটি টাকার ঘুষ কেলেঙ্কারি এবং বাবার টেন্ডার বাণিজ্যের খবরেও পত্রিকায় শিরোনাম হয়েছেন তিনি। যদিও তিনি তার বিরুদ্ধে থাকা প্রায় সব অভিযোগই অস্বীকার করেছেন।
গত কয়েক মাস ধরেই আসিফ মাহমুদের পদত্যাগের গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল। ধারণা করা হচ্ছিল তিনি পদত্যাগ করে জাতীয় নাগরিক পার্টি থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এরই মধ্যে গত ৯ নভেম্বর কুমিল্লা থেকে স্থায়ী ঠিকানা পরিবর্তন করে ঢাকা-১০ সংসদীয় এলাকার ভোটার হয়েছেন আসিফ।
নানা আলোচনার মধ্যে বুধবার দুপুরে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন ডাকলেও সেখানে পদত্যাগের কথা জানায়নি এই ছাত্র উপদেষ্টা।
পরে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে ওই দুই জনের পদত্যাগের কথা নিশ্চিত করা হয়।
এর আগেও অন্তর্বর্তী সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদকে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে পদত্যাগের পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল।
গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর ৮ আগস্ট মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। এই সরকারে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের প্রতিনিধি হিসেবে তিনজন সরকারে জায়গা পান। এর মধ্যে নাহিদ ইসলাম তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় পান।
আসিফ মাহমুদকে প্রথমে শ্রম উপদেষ্টা করা হলেও পরে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে পাঠানো হয় তাকে। মাহফুজ আলম শুরুতে উপদেষ্টা পদমর্যাদায় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ছিলেন।
জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রনেতাদের উদ্যোগে গত ফেব্রুয়ারিতে নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যাত্রা শুরু করে। নাহিদ ইসলাম উপদেষ্টা পরিষদ থেকে পদত্যাগ করে দলটির আহ্বায়ক হন। এরপর তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হন মাহফুজ আলম।
অবশ্য মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদের এনসিপিতে কোনো পদে না থাকলেও দলটিতে তাদের প্রভাব রয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
এদিকে আসিফ মাহমুদ যে আসনের ভোটার হয়েছেন সেই ঢাকা-১০ আসনে এনসিপি এবং বিএনপি- দুই দলই প্রার্থী ঘোষণা করেছে। ফলে তিনি স্বতন্ত্র নাকি অন্য কোনো দল থেকে ভোট করবেন- সেটা এখনো পরিষ্কার নয়।
মাহফুজ আলমের গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুর-১ আসনে। আসনটিতেও বিএনপি দীর্ঘদিন দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করলেও সোমবার বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম দলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন। তাকে ওই আসন থেকে মনোনয়ন দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। ফলে লক্ষ্মীপুর-১ আসনে বিএনপির সঙ্গে সমঝোতা করে মাহফুজের ভোট করার সম্ভাবনাও ক্ষীণ।
জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলো জোট গঠনের চেষ্টায় আছে। এরই মধ্যে এনসিপি, এবি পার্টি ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ে একটি নতুন জোট আত্মপ্রকাশ করেছে।
এ সম্পর্কিত আরও খবর:



