হামাসকে ‘কুকুরের বাচ্চা’ বললেন মাহমুদ আব্বাস

ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। ছবি : রয়টার্স
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। ছবি : রয়টার্স

ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস গাজার শাসকদল হামাসকে ‘কুকুরের বাচ্চা’ বলে অভিহিত করেছেন। একইসঙ্গে তিনি গাজায় আটকে রাখা ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি, হামাসের নিরস্ত্রীকরণ এবং গাজার নিয়ন্ত্রণ ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অধিকৃত পশ্চিম তীরে এক বৈঠকে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট হামাসের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে এই দাবি জানান।

মাহমুদ আব্বাস বলেন, হামাস ইসরায়েলকে গাজায় হামলা চালানোর ‘সুযোগ’ করে দিয়েছে। তিনি হামাসকে অবিলম্বে ‘জিম্মিদের মুক্তি দিয়ে এই ঝামেলা শেষ করতে’ বলেন। হামাসের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্টের এই মন্তব্য গত ১৮ মাসের মধ্যে সবচেয়ে কঠোর।

হামাসের এক কর্মকর্তা আব্বাসের এই ‘অবমাননাকর ভাষা’র নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এটি ‘তার নিজের জনগণের একটি উল্লেখযোগ্য অংশের’ প্রতি অবমাননা।

গত সপ্তাহে হামাস গাজায় নতুন যুদ্ধবিরতির জন্য ইসরায়েলের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। ওই প্রস্তাবে ছয় সপ্তাহের জন্য যুদ্ধবিরতির বিনিময়ে হামাসের নিরস্ত্রীকরণ এবং ৫৯ জন জিম্মির মধ্যে ১০ জনকে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছিল। হামাস যুদ্ধ বন্ধ এবং ইসরায়েলি সেনা সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের বিনিময়ে সব জিম্মিকে হস্তান্তর করার কথা জানায়। তারা অস্ত্র সমর্পণ করতেও অস্বীকার করে।

২০০৭ সালে হামাস গাজার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকে মাহমুদ আব্বাসের নেতৃত্বাধীন ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ কেবল পশ্চিম তীরের কিছু অংশ শাসন করছে। পিএ নিয়মিতভাবে দাবি করে আসছে, তারা যুদ্ধ-পরবর্তী গাজার দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত। তবে ফিলিস্তিনিরা হামাসের বিরুদ্ধে  যথেষ্ট সোচ্চার না হওয়ায় তাদের সমালোচনাও করে আসছে।

রামাল্লায় ফিলিস্তিনি কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের এক বৈঠকে আব্বাস হামাসের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “হামাস জিম্মিদের আটকে রাখার মাধ্যমে দখলদারকে [ইসরায়েল] গাজায় তাদের অপরাধ চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। কুকুরের বাচ্চারা, তোমরা যাদের ধরে রেখেছ তাদের মুক্তি দাও এবং এই ঝামেলা শেষ করো। তাদের অজুহাত বন্ধ করো এবং আমাদের বাঁচাও।”

ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, হামাসকে গাজার দায়িত্ব এবং তাদের অস্ত্র পিএ-এর কাছে ‘হস্তান্তর’ করতে হবে এবং একটি রাজনৈতিক দলে রূপান্তরিত হতে হবে।

এদিকে, হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য বাসেম নাইম আব্বাসের ‘অবমাননাকর ভাষা’ ব্যবহারের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, “আব্বাস বারবার এবং সন্দেহজনকভাবে দখলদারদের অপরাধ এবং আমাদের জনগণের ওপর চলমান আগ্রাসনের জন্য দোষ চাপিয়ে দেন।”

ইসরায়েল গত ২ মার্চ থেকে গাজায় মানবিক সহায়তা এবং বাণিজ্যিক সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। এর দুই সপ্তাহ পরে গাজায় পুনরায় আক্রমণ শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। তারা বলে আসছে, চাপের কারণে হামাস অবশিষ্ট ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি দিতে বাধ্য হবে। তারপর থেকে গাজায় চালানো হামলায় অন্তত ১ হাজার ৯২৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে বলে দাবি গাজার হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের।

গাজার শাসক গোষ্ঠী হামাস ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালিয়ে প্রায় ১ হাজার ২০০ জনকে হত্যা এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যাওয়ার পর থেকেই গাজায় পাল্টা হামলা শুরু করে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি হামলায় গাজায় সবমিলিয়ে ৫১ হাজার ৩০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনির প্রাণ গেছে, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নারী ও শিশু।

আরও পড়ুন