ভারতের কাশ্মীরের পহেলগামে স্মরণকালের যে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটলো তাতে নিহত ২৬ জন ও আহতদের বেশিরভাগ হিন্দু ধর্মাবলম্বী ও পর্যটক।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, গুলি করার আগে বন্দুকধারীরা নাম জানতে চেয়েছিল।
এই হামলা এমন এক সময় করা হলো যখন ভারত সফরে এসেছেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্স। তাছাড়া দেশটির প্রধানমন্ত্রীও রয়েছেন সৌদি আরব সফরে।
বার্তা সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, দক্ষিণ কাশ্মীরের অনন্তনাগ জেলার পহেলগামের পাহাড়ে একটি রিসর্টের অদূরে পর্যটকেরা আক্রান্ত হন। সবুজে ঘেরা বৈসরন উপত্যকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে গিয়ে তারা সন্ত্রাসীদের কবলে পড়েন।
কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা পর্যটকদের নাম জিজ্ঞাসা করে গুলি করে। এক্ষেত্রে হিন্দু ও পর্যটকেরাই তাদের গুলিতে আক্রান্ত হয়েছেন।
এদিকে সৌদি আরব সফররত প্রধানমন্ত্রী হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ‘দোষীদের কেউ রেহাই পাবে না।’ নরেন্দ্র মোদীর নির্দেশে পহেলগাও গেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
হামলার ঘটনার পরই সেনা এবং পুলিশ ঘটনাস্থলে অভিযান শুরু করেছে। জঙ্গিদের খোঁজে এলাকা ঘিরে তল্লাশি চালানো হচ্ছে বলে সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে।
রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু, প্রধানমন্ত্রী মোদী, জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলটির লেফটেন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিংহ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক খবরে বলা হয়, এই হামলার দায় স্বীকার করেছে ‘কাশ্মীর রেসিস্ট্যান্স’ নামের একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গোষ্ঠীটি এই ঘোষণা দেয়। তবে বিষয়টি বার্তা সংস্থার পক্ষ থেকে স্বাধীনভাবে যাচাই করা যায়নি।
জম্মু–কাশ্মীরে বেশ কয়েক বছর ধরে সশস্ত্র গোষ্ঠীর প্রধান লক্ষ্য ছিল নিরাপত্তারক্ষী বাহিনী। বহুদিন ধরে সশস্ত্র গোষ্ঠী পর্যটকদের আক্রমণ করেনি। নিরাপত্তা বাহিনী ছাড়াও সশস্ত্র গোষ্ঠীদের আক্রমণে পরিযায়ী শ্রমিকদের কেউ কেউ নিহত হয়েছিলেন। তবে স্থানীয় মানুষজনের অর্থনীতির স্বার্থে পর্যটকদের ওপর কোনো হামলা হয়নি। ফলে এই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পর্যটকের সংখ্যা বেড়ে গিয়েছিল।
গত বছরের মে মাসে অবশ্য এই পহেলগামেই সশস্ত্র গোষ্ঠীর আক্রমণে আহত হয়েছিলেন দুজন পর্যটক। কিন্তু সরকার এই ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন মনে করেছিল। মঙ্গলবারের ঘটনার পর মনে করা হচ্ছে, সশস্ত্র গোষ্ঠী সম্ভবত তাদের কৌশল বদল করেছে। এ ঘটনার পর জম্মু–কাশ্মীরে পর্যটন ব্যবসা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
জম্মু–কাশ্মীরে বিধানসভা নির্বাচনের পর এত দিন পরিস্থিতি শান্তই ছিল। তবে মঙ্গলবারের ঘটনায় স্পষ্ট- উপদ্রুত উপত্যকায় সশস্ত্র গোষ্ঠীর তৎপরতা শেষ হয়ে যায়নি।
গত বছর জুন মাসে লোকসভা ভোট মেটার পরেই রিয়াসি জেলার শিবখোদা মন্দির থেকে কাটরাগামী পুণ্যার্থীদের বাসে হামলা চালিয়েছিল জঙ্গিরা। ওই হামলায় ১০ জন নিহত হয়েছিলেন।
এ সংক্রান্ত আরও খবর: