অন্তবর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার মাত্র তিন মাসে দেশের ব্যাংকগুলোতে কোটি টাকার বেশি জমা রাখা হিসাবের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় পাঁচ হাজার। শুধু আমানতকারীর সংখ্যাই নয়, বেড়েছে এসব অ্যাকাউন্টে জমা টাকার পরিমাণও।
এসব আমানতকারীরা আগে থেকে কোটিপতি ছিলেন নাকি আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর হয়েছেন, সে তথ্য প্রকাশ করেনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর প্রান্তিক শেষে অর্থাৎ সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বরে মোট কোটি টাকার বেশি আমানত থাকা অ্যাকাউন্টধারীর সংখ্যা ১ লাখ ২২ হাজার। আর সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে এমন অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১৭ হাজার।
তিন মাসের ব্যবধানে কোটি টাকার বেশি জমা থাকা অ্যাকাউন্টের সংখ্যা বেড়েছে ৪ হাজার ৯৫৪টি বা ৪.২৩ শতাংশ।
শুধু অ্যাকাউন্টধারীর সংখ্যাই নয়, বেড়েছে এসব অ্যাকাউন্টে জমা টাকার পরিমাণও।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুসারে, ডিসেম্বর প্রান্তিক শেষে কোটি টাকার বেশি জমা থাকা আমানতকারীর আউটস্ট্যান্ডিং ব্যালান্স দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা।
সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে এসব অ্যাকাউন্টে জমা ছিল ৭ লাখ ৪৭ হাজার কোটি টাকা।
তিন মাসের মধ্যে এসব অ্যাকাউন্টে জমা বেড়েছে ১৮ হাজার কোটি টাকা বা ৩.৭৫ শতাংশ।
অক্টোবর-ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে কোটি টাকার বেশি জমা থাকা ব্যক্তি বা একক পর্যায়ের অ্যাকাউন্ট ১ হাজার ৭২টি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫ হাজার ৫৭৯টি। এসব অ্যাকাউন্টে আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৩ হাজার ৮০ কোটি টাকা।
আর আগের সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে ব্যক্তি পর্যায়ের ৩৩ হাজার ৮৬১টি অ্যাকাউন্টে জমা ছিল ৮৩ হাজার ৩৭৫ কোটি টাকা।
তিন মাসের ব্যবধানে অ্যাকাউন্টের সংখ্যা বেড়েছে ৫.০৭ শতাংশ এবং জমা টাকা বেড়েছে ১২.৫৪ শতাংশ।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বিডিনিউজকে বলেন, “ব্যক্তির আয় সাধারণত ফিক্সড থাকে। ফলে তাদের অ্যাকাউন্টগুলো কোটি টাকার অ্যাকাউন্টে রূপান্তরের সম্ভাবনা কম। অত্যাধিক মূল্যস্ফীতির কারণে ছোট-বড় ব্যবসাগুলো এখন খুব বেশি ভালো করতে পারছে না, তারা নতুন করে বড় ধরনের বিনিয়োগেও যাচ্ছে না।”
এমন প্রেক্ষাপটে নামে-বেনামে ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে টাকা জমা হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্যালোচনা করা উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, “ব্যাংকে ডিপোজিট বাড়া অবশ্যই ভালো খবর। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে দুর্নীতির টাকা নামে-বেনামে জমা রাখার তথ্যও উঠে আসছে। ফলে কোটি টাকার যেসব অ্যাকাউন্ট বাড়ছে; সেগুলো রিয়েল কি না, এটা যাচাই-বাছাই করা প্রয়োজন।”
কোটি টাকার ব্যক্তি অ্যাকাউন্ট বাড়ার আরেকটি অর্থ হল-‘সমাজে বৈষম্য বাড়ছে’ বলেও মন্তব্য করেন ফাহমিদা খাতুন।