ঢাকার ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও গুঁড়িয়ে দিয়েছে বিক্ষোভকারী। এ ঘটনা নিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো গুরুত্বের সঙ্গেই সংবাদ প্রকাশ করেছে। গত দুই দিনে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত কিছু প্রতিবেদন এখানে তুলে ধরা হলো:
গার্ডিয়ান
‘বাংলাদেশি বিক্ষোভকারীরা স্বাধীনতার প্রতীক শেখ হাসিনার পারিবারিক বাড়ি ধ্বংস করেছে’ শিরোনামে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে হাজারো বিক্ষোভকারী নির্বাসিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে তার পারিবারিক বাসভবন ধ্বংস করেছে। এই বাড়িটি একসময় দেশের স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবে পরিচিত ছিল, কিন্তু এখন বিক্ষোভকারীরা বলছেন, এটি শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী শাসনের প্রতীক।
এতে বলা হয়, নির্বাসিত অবস্থায় প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে সমর্থকদের উদ্দেশ্যে দেওয়া শেখ হাসিনার এক ঘিরে এই হামলার সূত্রপাত হয়। বাড়িটি একসময় শেখ হাসিনার বাবা ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবন ছিল। ১৯৭১ সালে এখান থেকেই তিনি বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বুধবার অনলাইনে শেখ হাসিনার ভাষণ শুরুর পরপরই বিক্ষোভকারীরা বাড়িটিতে ঢুকে ইটের দেয়াল ভাঙতে শুরু করে। পরে ক্রেন ও এক্সক্যাভেটর এনে পুরো ভবনটি ধ্বংস করা হয়।
ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের বরাত দিয়ে গার্ডিয়ান জানায়, রাতভর একাধিক হামলার ঘটনায় শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সমর্থকদের বেশ কিছু বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ডয়চে ভেলে
‘বাংলাদেশ: নির্বাসিত প্রধানমন্ত্রী হাসিনার পারিবারিক বাড়ি ধ্বংস করল বিক্ষুব্ধ জনতা’ শিরোনামে ডয়চে ভেলের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে তার বাবা এবং বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের ঢাকার বাড়িতে আগুন দিয়েছে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী। বুধবার রাতে এই ঘটনা ঘটে, যখন হাসিনা এক উত্তেজনাপূর্ণ বক্তৃতা দিয়ে তার সমর্থকদের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
এতে বলা হয়, বিক্ষোভকারীরা হুমকি দিয়েছিল, যদি শেখ হাসিনা তার বক্তৃতা চালিয়ে যান, তবে তারা ঐতিহাসিক ভবনটিকে বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেবে, যে ভবনটি বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রতীক হয়ে উঠেছে।
এই বাড়ি থেকেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা নেতা শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন উল্লেখ করে প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ক্ষমতাচ্যুত নেত্রী অনলাইনে বক্তব্য শুরু করলে বিক্ষোভকারীরা বাড়িটিতে ঢুকে ইটের দেয়ালগুলো ভাঙতে শুরু করে। জনতার মধ্যে কেউ কেউ লাঠি এবং হাতুড়ি নিয়ে আসেন, আবার অন্যরা বাড়িটি ধ্বংস করতে ক্রেন ও এক্সক্যাভেটর নিয়ে আসে।
ইন্ডিপেন্ডেন্ট
‘বাংলাদেশে শেখ হাসিনার পারিবারিক বাসভবন বিক্ষোভকারীরা গুঁড়িয়ে দিয়েছে’ শিরোনামে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ইন্ডিপেন্ডেন্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বিক্ষোভকারীরা তাণ্ডব চালিয়ে দেশটির প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক বাসভবন ধ্বংস করে দিয়েছে। শেখ মুজিব ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের কাছ থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন এবং তার এই বাড়িটি ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, শেখ মুজিবুর রহমানের মেয়ে ও বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত নেতা শেখ হাসিনার একটি রাজনৈতিক ভাষণকে কেন্দ্র করে বুধবার রাতে ঢাকায় হাজার হাজার মানুষ একত্রিত হয়ে ‘বুলডোজার মিছিলের’ আয়োজন করে, যার লক্ষ্য ছিল শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িটি ভেঙে ফেলা।
রাত ৮টার দিকে বিক্ষোভকারীরা ওই বাড়ির সামনে জড়ো হতে শুরু করে। অনেকেই লাঠি, হাতুড়ি, শাবলসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম নিয়ে আসে এবং ভবনের ভেতরে প্রবেশ করে। রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ বাড়ির উপরের তলায় আগুন দেওয়া হয়। মধ্যরাতের মধ্যে সেখানে ক্রেন ও এক্সক্যাভেটর পৌঁছে যায় এবং ভবনটির অনেকটাই মাটির সাথে মিশিয়ে ফেলা হয়। এ ছাড়া রাতভর একাধিক হামলার ঘটনায় রাজধানীতে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের সমর্থকদের বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়।
বিবিসি
‘বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পারিবারির বাড়িতে আগুন দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা’ শিরোনামে প্রকাশিত বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বিক্ষোভকারীরা অপসারিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পারিবারিক পুরোনো বাড়ি এবং তার দলের অন্যান্য সদস্যদের বাড়িতে ভাঙচুর ও আগুন দিয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, ভারতে অবস্থানরত শেখ হাসিনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাষণ দেবেন– এই খবর ছড়ানোর পরই এই ঘটনার সূত্রপাত হয়। বুধবার সন্ধ্যায় এক্সক্যাভেটর দিয়ে শেখ হাসিনার প্রয়াত বাবা, বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি ভেঙে ফেলা হয়, যা জাদুঘরে রূপান্তর করা হয়েছিল।
আল জাজিরা
‘বাংলাদেশে অপসারিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পারিবারিক বাড়িতে আগুন দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা’ শিরোনামে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী দেশের প্রতিষ্ঠাতা নেতার বাড়ি ধ্বংস করেছে ও আগুন দিয়েছে। বুধবার রাতে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে থেকে সমর্থকদের উদ্দেশে দেওয়া তার ভাষণ ঘিরে এ ঘটনা।
এতে বলা হয়, রাজধানী ঢাকায় এই বাড়িটি ছিল শেখ হাসিনার প্রয়াত পিতা, শেখ মুজিবুর রহমানের, যিনি ১৯৭১ সালে দেশের স্বাধীনতা আন্দোলন নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ১৯৭৫ সালে এই বাড়িতেই তাকে হত্যা করা হয়। পরবর্তীতে শেখ হাসিনা বাড়িটিকে একটি জাদুঘরে পরিণত করেন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বুধবার রাতে কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী ঐতিহাসিক বাড়ি ও স্বাধীনতা স্মৃতিস্তম্ভের চারপাশে জড়ো হয়। তাদের অনেকের হাতে ছিল লাঠি, হাতুড়ি ও অন্যান্য যন্ত্র। এ সময় অন্যরা ক্রেন ও এক্সক্যাভেটর দিয়ে বাড়িটি ভেঙে ফেলে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এবং বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়, ভবনটি প্রায় মাটির সাথে মিশে গেছে এবং এর কিছু অংশ সম্পূর্ণভাবে পুড়ে গেছে।
ডেইলি স্টারের বরাতে প্রতিবেদনে বলা হয়, রাতভর চালানো এই হামলার ঢেউ শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সমর্থকদের বেশ কয়েকটি বাড়ি এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানেও লাগে।
রয়টার্স
‘বাংলাদেশে বিক্ষোভকারীরা ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাবার বাড়িতে আগুন দিয়েছে’ শিরোনামে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাজার হাজার বিক্ষোভকারী বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা নেতার বাড়িতে আগুন দিয়েছে, যখন তার মেয়ে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমর্থকদের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বুধবার রাতে কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী ঐতিহাসিক বাড়ি এবং স্বাধীনতা স্মৃতিস্তম্ভের চারপাশে জড়ো হয়, যাদের কেউ কেউ লাঠি, হাতুড়ি এবং অন্যান্য সরঞ্জাম নিয়ে এসেছিল। এ সময় অন্যরা ক্রেন ও এক্সক্যাভেটর নিয়ে বাড়িটি ধ্বংস করতে আসে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ধ্বংসযজ্ঞ চলতে থাকে এবং বাড়ির সামনের অংশের অনেকটাই ধ্বংস হয়ে যায়। অনেককে বাড়ির ভেতরে ঢুকে স্টিল, কাঠের জিনিসপত্র এবং বই নিয়ে যেতে দেখা যায়।
এপি
‘বাংলাদেশে অস্থিরতা: শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পর নতুন সরকার পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে’ শিরোনামে এপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের নতুন সরকার বিভিন্ন সমস্যা মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে, যার মধ্যে রয়েছে বিপর্যস্ত অর্থনীতি এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা।
এতে বলা হয়, হাসিনার আওয়ামী লীগ সম্প্রতি বিক্ষোভের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে, যা ছাত্র আন্দোলনকারী ও হাসিনা-বিরোধী গোষ্ঠীগুলোকে ক্ষুব্ধ করেছে, যারা বুধবার বাংলাদেশের স্বাধীনতার নেতা ও হাসিনার বাবা শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক বাড়িতে হামলা চালিয়ে সেটি ভেঙে ফেলেছে।
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের দপ্তর বলছে, ‘ভারতে পলাতক শেখ হাসিনা জুলাই মাসের অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে যে উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন, তা জনগণের মধ্যে গভীর ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।’
দ্য ডন
‘বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে আগুন দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করেছে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডন। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা নেতার বাড়িতে আগুন দিয়েছে হাজারো বিক্ষোভকারী। তার মেয়ে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া বক্তব্যে সমর্থকদের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানানোর পর বাড়িটিতে আগুন দেওয়া হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে এতে আরও বলা হয়, ‘বুলডোজার মিছিল’ নামে বিক্ষোভ কর্মসূচির অংশ হিসেবে কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী ঐতিহাসিক বাড়ি ও স্বাধীনতা স্মৃতিস্তম্ভের চারপাশে জড়ো হন, যাদের অনেকে লাঠি, হাতুড়ি এবং অন্যান্য সরঞ্জাম নিয়ে হাজির হয়েছিলেন। অন্যদিকে কিছু বিক্ষোভকারী ক্রেন ও খননযন্ত্র নিয়ে বাড়িটি ভাঙতে যান।
বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার প্রতীক এই বাড়ি থেকেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন, বলা হয় ডনের প্রতিবেদনে।
এনডিটিভি
‘বাংলাদেশে মুজিবুর রহমানের ঢাকার বাসভবনে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করল জনতা’ শিরোনামে প্রকাশিত ভারতের সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা শেখ মুজিবুর রহমানের ঢাকার বাসভবনে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। তার মেয়ে বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী অনলাইনে ভাষণ দেওয়ায় প্রতিবাদে বিপুল সংখ্যক বিক্ষোভকারী বাড়িটিতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে প্রতিবেদনে বলা হয়, এর আগে অনলাইনে বুধবার রাত ৯টায় শেখ হাসিনার ভাষণ প্রচার করা হবে– এমন ঘোষণা আসার পর পাল্টা কর্মসূচি হিসেবে ঘোষিত ‘বুলডোজার মিছিলের’ অংশ হিসেবে কয়েক হাজার মানুষ রাজধানীর ধানমন্ডিতে স্মৃতিসৌধ জাদুঘরে রূপান্তরিত বাড়িটির সামনে জড়ো
এতে আরও বলা হয়, এই বাড়িটি বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রতীক, কারণ শেখ মুজিব স্বাধীনতা-পূর্ববর্তী স্বায়ত্তশাসন আন্দোলনের নেতৃত্ব মূলত এখান থেকেই দিয়েছিলেন।