যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কানাডার পুরোনো সম্পর্ক, যা অর্থনীতির গভীর একীভূতকরণ এবং নিরাপত্তা ও সামরিক সহযোগিতার ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল, তা এখন ‘শেষ’ হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন কানাডার নতুন প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি।
অটোয়ায় বৃহস্পতিবার মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতির মুখে কানাডার অর্থনীতিকে ‘মৌলিকভাবে নতুন করে কল্পনা করতে হবে’ মন্তব্য করে কার্নি আরও বলেন, কানাডা এর জবাবে পাল্টা শুল্ক আরোপ করবে, যা যুক্তরাষ্ট্রের ওপর ‘সর্বোচ্চ প্রভাব’ ফেলবে।
ট্রাম্প বুধবার ঘোষণা দেন, আমদানি করা গাড়ি ও গাড়ির যন্ত্রাংশের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে এবং এটি ‘স্থায়ী’ হবে।
কানাডার লিবারেল পার্টির নেতা কার্নি ১৯৬৫ সালে স্বাক্ষরিত কানাডা-যুক্তরাষ্ট্র অটোমোটিভ প্রোডাক্টস চুক্তিকে তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি হিসেবে অভিহিত করেন। ফরাসি ভাষায় তিনি বলেন, ‘এই শুল্কের কারণে সেই চুক্তি শেষ হয়ে গেছে।‘ তবে তিনি মনে করেন, সরকার ও ব্যবসায়ী সম্প্রদায় একসঙ্গে কাজ করে শিল্পকে ‘পুনর্কল্পনা ও পুনর্গঠন’ করতে পারলে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের মধ্যেও কানাডা তাদের অটো শিল্প টিকিয়ে রাখতে পারবে।
কার্নি বলেন, কানাডার এমন একটি অর্থনীতি গড়ে তুলতে হবে যা কানাডিয়ানরা নিজেরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এর জন্য অন্য বাণিজ্যিক অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কানাডার শক্তিশালী বাণিজ্য সম্পর্ক থাকবে কি না, তা এখনও দেখার বিষয়। আগামী মাসে অনুষ্ঠেয় সাধারণ নির্বাচনের আগে কার্নি তার প্রচার পরিকল্পনা পরিবর্তন করে এই শুল্ক মোকাবিলায় মনোযোগ দিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে কানাডার পণ্যের ওপর আংশিকভাবে ২৫ শতাংশ শুল্ক এবং সব অ্যালুমিনিয়াম ও ইস্পাত আমদানির ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। এর জবাবে কানাডা এ পর্যন্ত প্রায় ৬০ বিলিয়ন কানাডিয়ান ডলার (৪২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) মূল্যের যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করেছে। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, নতুন গাড়ির শুল্ক ২ এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে এবং যন্ত্রাংশের ওপর শুল্ক মে মাসে বা তার পরে শুরু হবে।
বৃহস্পতিবার সকালে ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে কানাডা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নকে (ইইউ) সতর্ক করে বলেন, তারা যদি যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বাণিজ্য যুদ্ধে একত্রিত হয়, তাহলে তাদের ওপর বর্তমান পরিকল্পনার চেয়ে অনেক বড় শুল্ক আরোপ করা হবে।
কার্নি বৃহস্পতিবার সকালে অটোয়ায় তার মন্ত্রীদের সঙ্গে সম্ভাব্য ‘বাণিজ্য বিকল্প’ নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি জানান, ট্রাম্প গত রাতে তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন এবং আগামী এক বা দুই দিনের মধ্যে তাদের মধ্যে ফোনালাপ হবে। এটিই হবে তাদের প্রথম কথোপকথন।
প্রধান বিরোধী দল কনজারভেটিভের নেতা পিয়ের পোলিভ্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই শুল্ক আরোপকে ‘অন্যায় ও অপ্রত্যাশিত’ বলে অভিহিত করেছেন। বামপন্থী দল এনডিপির নেতা জগমিত সিং, যিনি আগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সংখ্যালঘু লিবারেল সরকারকে সমর্থন করেছিলেন, বৃহস্পতিবার অটো উৎপাদন কেন্দ্র উইন্ডসরে শ্রমিক ও ইউনিয়ন নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তিনি এই শুল্ককে “বিশ্বাসঘাতকতা’ আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প কোনো কারণ ছাড়াই কানাডার সঙ্গে অবৈধ বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করেছেন।”
গত বছর যুক্তরাষ্ট্র কানাডা থেকে প্রায় ৮০ লাখ গাড়ি আমদানি করে, যার মূল্য প্রায় ২৪০ বিলিয়ন ডলার এবং এই সংখ্যা বিশ্বে গত বছর কানাডার মোট রপ্তানি করার গাড়ির প্রায় অর্ধেক।
এদিকে মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লদিয়া শেইনবাউম বৃহস্পতিবার বলেন, তার সরকার ‘মেক্সিকোকে সবসময় রক্ষা করবে’ এবং শুল্কের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত কোম্পানিগুলোকে সুরক্ষা দেবে। তিনি ৩ এপ্রিল ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্কের ‘সমন্বিত জবাব’ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।