ঢাকায় ভেঙে ফেলা হল ‘মৃত্যুঞ্জয়ী প্রাঙ্গণে’র অবশিষ্ট স্থাপনা

বিজয় সরণির এই মৃত্যুঞ্জয়ী প্রাঙ্গণ সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় ২০২৩ সালের ১০ নভেম্বর।
বিজয় সরণির এই মৃত্যুঞ্জয়ী প্রাঙ্গণ সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় ২০২৩ সালের ১০ নভেম্বর।

‘জুলাই গণমিনার’ নির্মাণের ঘোষণার সপ্তাহের ব্যবধানে ঢাকার বিজয় সরণিতে বাংলাদেশের ইতিহাস জড়িয়ে থাকা ‘মৃত্যুঞ্জয়ী প্রাঙ্গণে’র ম্যুরাল ভেঙে ফেলার কাজ শুরু হয়েছে।

ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান তুলে ধরা হয়েছিল ওই প্রাঙ্গণে।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত প্রায় সব ভাস্কর্য ও ম্যুরাল আক্রান্ত হয়েছিল। সেসময়ই আক্রান্ত হয় মৃত্যুঞ্জয়ী প্রাঙ্গণে থাকা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য।

দৈনিক প্রথম আলোর ২০ আগস্টের এক খবরে বলা হয়, ৫ থেকে ১৪ আগস্টের মধ্যে ৫৯টি জেলায় ১ হাজার ৪৯৪টি ভাস্কর্য, রিলিফ ভাস্কর্য, ম্যুরাল ও স্মৃতিস্তম্ভ ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও উপড়ে ফেলা হয়েছে।

বেশির ভাগ ভাঙচুর ও আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটে ৫, ৬ ও ৭ আগস্ট।

এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে সকাল থেকে বুলডোজার দিয়ে মৃত্যুঞ্জয়ী প্রাঙ্গণের অবশিষ্ট সাতটি ম্যুরালও ভেঙে ফেলার কাজ শুরু হয়। কে বা কারা ম্যুরালগুলো অপসারণ করছে তার হদিস মেলেনি।

অবশ্য গত ১৯ জুন ‘গণমিনার বাস্তবায়ন কমিটি’ নামে একটি সংগঠন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন করে ওই স্থানটিতে জুলাই ‘গণমিনার’ বানানোর ঘোষণা দিয়েছিল।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজম বলেছিলেন, “৫ আগস্টের জয়ের মধ্য দিয়ে এ দেশের মানুষ মুক্তির আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করেছে। এই অভ্যুত্থানে শহীদ হয়েছেন ১ হাজার ৪০০ জন, আহত হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। তাদের স্মরণেই নির্মাণ করা হবে এই গণমিনার।”

সেসময় গণমিনার নির্মানে গণচাঁদা সংগ্রহের উদ্যোগ নেওয়ার কথাও জানানো হয়।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ভেঙে ফেলা হয় মৃত্যুঞ্জয়ী প্রাঙ্গণে থাকা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যটি।

এদিকে, মুক্তিযুদ্ধের চিহ্ন ধারণ করা এই স্থাপনা অপসারণের উদ্যোগের প্রতিবাদ জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ ও একাত্তরের চেতনা ধারণকারী শিল্পী, বুদ্ধিজীবী, লেখক ও প্রকাশকেরা।

শিল্পী চারু পিন্টু তার ফেইসবুকে লিখেছেন, “ঢাকার বিজয় সরণি—একটি নাম, একটি পথ, একটি ইতিহাস। যেখানে পদচিহ্ন ছিল বঙ্গবন্ধুর, যেখানে প্রতিটি দেয়াল, প্রতিটি খোদাই সাক্ষ্য ছিলো এক জাতির জন্মের। সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলো একটি ভাস্কর্য—বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি, আর তার চারপাশে দৃশ্য ছিলো আমাদের সংগ্রামের, আমাদের রক্তাক্ত জয়ের ইতিহাসের নিঃশব্দ দলিল।”

“আজ সেই দেয়ালের সামনে পড়ে আছে ভাঙা ইট, মুচড়ে যাওয়া লোহার রড, আর ধুলোমাখা স্মৃতি—যা এখন আর কেউ ছুঁতে চায় না। বিশাল হলুদ এক্সকাভেটরটা দাঁড়িয়ে, মাথা নুইয়ে, যেন নিজেই লজ্জিত তার কাজের জন্য। কিন্তু যন্ত্রের কি বোধ থাকে?”

লেখক আজিজুর রহমান খান আসাদ লিখেছেন, “ঢাকায় মুক্তিযুদ্ধের ম্যুরাল ভাঙা মানে শুধু একটি শিল্পকর্ম ও ঐতিহাসিক স্মৃতি ধ্বংস নয়, বরং মুক্তিযুদ্ধে পরাজয়ের প্রতিশোধ।”

এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছে প্রকাশক রবিন আহসান। তিনি বলেন, “সরকার একটা সাম্প্রদায়িক সংঘাত তৈরির চেষ্টা করছে মনে হচ্ছে!”

আরও পড়ুন