বইমেলায় স্যানিটারি ন্যাপকিন প্রদর্শন বন্ধ করে দিয়েছে বাংলা একাডেমী। এজন্য বরাদ্দকৃত দুটি স্টলও আর খুলছে না রোববার থেকে।
বাংলা একাডেমী বলছে, অনেকেই দলগতভাবে এসে স্যানিটারি ন্যাপকিন বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। তাই এ ধরনের পণ্যের প্রদর্শনী বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের নারী ও শিশু স্বাস্থ্য সুরক্ষা পণ্য ব্র্যান্ড ‘স্টে-সেইফ’ বইমেলা প্রাঙ্গণে দুটি স্টল পরিচালনা করছিল। ১১ ফেব্রুয়ারির পর কয়েক দফায় ন্যাপকিনকে ‘গোপন পণ্য’ বলে আখ্যা দিয়ে এর প্রকাশ্য প্রদর্শনী বা বিতরণ বন্ধের দাবি ওঠে।
সেসময় পুলিশ, আনসারসহ ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের ভলান্টিয়ারদের সহযোগিতায় পরিস্থিতি শান্ত করা হয়।
পরে বাংলা একাডেমির নির্দেশে বইমেলার ইভেন্ট ম্যানেজমন্ট চিঠি দেয় প্রাণ- আরএফএল গ্রুপকে। ওই চিঠিতে বলা হয়, স্যানিটারি ন্যাপকিন প্রদর্শনী ও বিক্রি বন্ধ করে বরং অন্য কোনও পণ্য রাখা যেতে পারে। এরপর রোববার প্রতিষ্ঠানটি মেলা থেকে স্যানিটারি ন্যাপকিন তুলে নেয়।
অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে চিঠিটি দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছে বইমেলার ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট।
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের ব্যবসায়িক স্বার্থকে বিবেচনায় রেখে ‘স্টল দুটি অন্য পণ্য (যেমন শিশু শিক্ষা সরঞ্জাম) দিয়ে প্রতিস্থাপনের অনুমতি দেওয়া যেতে পারে’ বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী রাকিব হাসান রাজ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, “বইমেলায় কী থাকবে বা কী থাকবে না সেটা সিদ্ধান্ত নেওয়ার আমরা কেউ না। আমরা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের দায়িত্বে আছি। একাডেমি কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে চিঠি ইস্যু করতে বলেছে, আমরা করেছি।’
বইমেলা কমিটির সচিব ও বাংলা একাডেমীর পরিচালক সরকার আমিন প্রথম আলোকে বলেন, “বইমেলার নীতি অনুযায়ী মেলায় বই ও খাবার ছাড়া অন্য কিছু বিক্রির সুযোগ নেই। তাই স্টল বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ”এটাতো আর বাণিজ্য মেলা না। এটা নিয়ে আমরা স্পন্সরকে বলেছি, আপনারা স্পন্সর করেছেন, ভালো। কিন্তু এসব পণ্য বিক্রি করা যাবে না। বই ছাড়া অন্যান্য পণ্য বিক্রির নীতিমালা নেই।”
এবিষয়ে প্রাণ-আরএফএলের অ্যাসিসট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার তৌহিদুজ্জমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘আমরা চিঠিটি পেয়েছি। এটাকে কেন্দ্র করে কোনও ইস্যু হোক, তা আমরা চাই না। যেহেতু আপত্তি উঠেছে, সেহেতু আমরা ‘স্টে সেফ’ কর্নার সরিয়ে ফেলছি।”
“আমরা সেখানে স্যানিটারি ন্যাপকিন বিক্রি করতাম না, ফ্রি স্যাম্পলিং করতাম। অনেক নারী মেলায় আসে, তাদের প্রয়োজনীয়তার কথা ভেবে এটা করা হয়েছিল,” যোগ করেন তিনি।
বাংলা একাডেমির বর্তমান অবস্থান স্যানিটারি প্যাড নিষিদ্ধতার মতো সমাজে অস্বাভাবিক বিষয়টি বৈধতা দান করেছে বলে মনে করেন নারী অধিকারকর্মী মারজিয়া প্রভা।
তিনি বলেন, “বাংলা একামেডির এই নতজানু নীতি একটি সুনির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে এরকম নানাবিধ স্বাভাবিক বিষয়কে ‘নিষিদ্ধ’ করার পক্ষে সমর্থনের ভূমিকা পালন করছে।”
বাঙালির প্রাণের উৎসব বইমেলা ঘিরে ভিড় জমান অগণিত পাঠক। এর বড় একটি অংশই নারী। সেই নারীদের কথা মাথায় রেখে প্রতিবছরই স্যানিটারি ন্যাপকিন প্রদর্শন ও বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়। সেখানে যোগাযোগের জন্য ফোন নম্বরও দেওয়া থাকতো। মেলায় ঢুকে এই নম্বরে যোগাযোগ করলে অথবা সরাসরি স্টলে গেলেই বিনামূল্যে এই ন্যাপকিন পাওয়া যেতো।