ছাত্রদল ও শিবিরের সাবেকদের দিয়ে শাহজালালে অ্যালামনাই কমিটি গঠন, বিতর্ক-ক্ষোভ

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘোষিত অ্যালামনাই কমিটি নিয়ে সাবেক শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মিশ্র প্রতিক্রিয়া এসেছে। কমিটি গঠনের স্বচ্ছতা নিয়ে যেমন প্রশ্ন ওঠেছে, তেমনি প্রতিষ্ঠার তিন দশক পর আহ্বায়ক কমিটি গঠনের প্রক্রিয়ায় যুক্তদের অভিনন্দনও জানিয়েছেন কেউ কেউ।

বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ১১৩ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় অ্যালামনাইয়ের আহ্বায়ক কমিটি গঠনের কথা জানানো হয়।

আহ্বায়ক কমিটিতে আহ্বায়কের পদটি শূন্য রাখা হলেও সহ-আহ্বায়ক হিসেবে রাখা হয়েছে রসায়ন বিভাগের প্রথম ব্যাচের মুজিবুর রহমান ও অর্থনীতি বিভাগের দ্বিতীয় ব্যাচের শাব্বির চৌধুরীকে।

এছাড়া পরিসংখ্যান বিভাগের তাজ উদ্দিনকে করা হয়েছে সদস্যসচিব।

মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ সেন্টারের সেমিনারকক্ষে এই কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে বলেও ওই বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন শাবিপ্রবি উপাচার্য সরওয়ারউদ্দিন চৌধুরী, সহ–উপাচার্য সাজেদুল করিম, কোষাধ্যক্ষ ইসমাইল হোসেনসহ প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা।

সহ-আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব।

কমিটি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সদস্যদের দুই-তৃতীয়াংশের বেশি সদস্য বিগত সময়ে ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

এছাড়া ছাত্রশিবিরের সঙ্গে যুক্ত এমন সাবেক শিক্ষার্থী যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজ দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়েছেন তাদের একটি বড় সংখ্যা ওই কমিটিতে স্থান পেয়েছেন।

কমিটিতে অন্যান্য রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মীদের উপস্থিতি হাতে গোনা বলেও অভিযোগ ওঠেছে।

এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে অনেকেই সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট দিয়েছেন। কেউ কেউ রাজনৈতিক বিবেচনায় এ ধরনের কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। আবার কেউ নারী ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতি দেখে হতাশা প্রকাশ করেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থী এম রহমান মিল্টন আহ্বায়ক ছাড়াই আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করে লিখেছেন, “৩০০০০ এলামনাইয়ের মধ্যে ১ জন কনভেনার পাওয়া গেলো না? সত্যি, দুঃখজনক।”

ওই পোস্টের মন্তব্যের ঘরে মমিন মনজুর নামে একজন সাবেক শিক্ষার্থী সকল বিভাগ থেকে সদস্য অন্তর্ভুক্ত না করার বিষয়টি তুলে ধরেছেন।

আফজাল হোসাইন আকন্দ রনি নামে আরেক সাবেক শিক্ষার্থী লিখেছেন, “ভাই অতি উন্নত মানের কমিটি হইসে! ৫-৭ টা ডিপার্টমেন্ট মানেই সাস্ট, বাকিরা গাছ ভোদাই।”

“রাজনীতির বাইরে এই দেশে কিছু করার উপায় নেই,” লিখেছেন সাবেক শিক্ষার্থী জাহিদ ইমতিয়াজ।

এ ধরনের নানামুখী মন্তব্যে ফেইসবুক সয়লাব হয়েছে ওই কমিটি ঘোষণার পর। অনেকে আবার কিছুদিন পর পর এ ধরনের উদ্যোগের সমালোচনা করে পোস্ট ও মন্তব্য দিয়েছেন পৃথকভাবে।

ফেইসবুকে দেওয়া একজন সাবেক শিক্ষার্থীর পোস্ট।

একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা করছেন জহির ইসলাম। শিক্ষা ছুটিতে থাকা শিক্ষক অ্যালামনাই কমিটি নিয়ে লিখেছেন, “বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এলুমনাই কমিটির নামে কয়দিন পরপর সার্কাস হয়! আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় থাকলে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, মহিলা লীগের মানুষজনই তাতে যুক্ত হয়! আর বিপরীত হলে জামাত, বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনের কোটায় অথবা বড়জোড় আঞ্চলিকতার কোটায়! এসব ফালতু সার্কাস দেখার জন্য এলুমনাই এসোসিয়েশন করার দরকার নাই!”

বিল্লাল হোসেন নামে আরেক শিক্ষার্থী অন্যান্য ব্যাচকে প্রাধান্য না দিয়ে কেবল প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্ত করার সমালোচনা করে লিখেছেন, “কুমিল্লার দুঃখ গোমতী নদী, আর সাস্টের দুঃখ ওয়ান, টু, থ্রি।”

অ্যালামনাই কমিটিকে চারদলীয় জোটের কমিটির সঙ্গে তুলনা করে সোহেল মুহাম্মদ নামে আরেক সাবেক শিক্ষার্থী লিখেছেন, “(এই কমিটিকে) পুরানা দিনের চারদলীয় জোটের অর্ধেকাংশ নিয়ে নির্বাচনপূর্ব কমিটি বলা যায়। আর জোটের বাইরের যদি দু-একজন থাকে, এদের দ্বারা আগের জগৎ নষ্ট হইছে।”

অ্যালামনাইয়ের কমিটি ঘিরে নানা বিতর্ক ও অভিযোগের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও আওয়ামী লীগ নেতা সুশান্ত দাস গুপ্তের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় আমরা দল হিসেবে এমন কোন উদ্যোগে শামিল হবো না যা অবৈধ ইউনূস সরকারের কার্যক্রমকে ভ্যালিডিটি দেয়। এটাই আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক অবস্থান।”

১১৩ জনের কমিটিতে ৫ থেকে ৬ জন তাদের মতাদর্শী রয়েছেন- স্মরণ করিয়ে দিলে তিনি বলেন, “সবার অবস্থান জানার পর আমরা আওয়ামী লীগ হিসেবে একটা বিবৃতি দেব। যদি কেউ থাকে সেটা তাদের ব্যক্তি পরিচয়ে। আওয়ামী লীগের সাথে তাদের কোন সম্পৃক্ততা নাই।”

কমিটি গঠনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, এই আহ্বায়ক কমিটি অ্যালামনাইয়ের কাঠামো ও গঠনতন্ত্র প্রণয়ন, রেজিস্ট্রেশনসহ প্রাথমিক কার্যক্রম পরিচালনা করবে এবং শিগগিরই পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় অ্যালামনাই গঠনের লক্ষ্যে গঠনতন্ত্রের আলোকে নির্বাচন আয়োজন করা হবে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ads