দীর্ঘ নিরবতা ভেঙে আচমকা বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে একযোগে সাক্ষাৎকার দিয়ে গেল সপ্তাহে হৈচৈ ফেলে দিয়েছিলেন বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবার কলম ধরলেন নিজেই, লিখেছেন ভারতের প্রভাবশালী ম্যাগাজিন দ্য উইকে।
কিছুটা স্মৃতিকথা, আংশিক ইশতেহারের আদলে ওই লেখায় ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক বিষয়ের প্রতিফলন ঘটেছে। মেলে ধরেছেন গণতন্ত্র রক্ষায় তার দীর্ঘ লড়াই, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রেখে যাওয়া আদর্শের নানাদিক। সেই সঙ্গে মুহাম্মদ ইউনূসের হাত ধরে বাংলাদেশ স্বৈরশাসন ও বিভেদের অন্ধকার হারিয়ে যাচ্ছে বলেও মত দিয়েছেন তিনি।
জুলাই অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা ভারতে গিয়ে আশ্রয় নেয়ার পর দিল্লি তাকে অতিথি হিসেবেই রাখছে। তার মধ্যে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের কিছু সভায় ভার্চুয়ালি অংশ নিচ্ছিলেন। তাতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার বেশ বিরক্ত হয়েছিল।
বিসমটেক সম্মেলনের ফাঁকে মোদীর সঙ্গে বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বিষয়টি তুলে শেখ হাসিনার মুখ বন্ধ রাখার ব্যবস্থা করতে বলেছিলেন। তখন মোদী পাল্টা বলেছিলেন, ব্যক্তি শেখ হাসিনার মুখে বাঁধন আঁটার কোনো সুযোগ তাদের নেই।
কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, শেখ হাসিনার বাঁধ বেশ আলগাই করে দিচ্ছে ভারত সরকার। বাংলাদেশে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা যখন রায়ের দিকে গড়াচ্ছে সেই সময়ে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় তার উপস্থিতি মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারকে চাপের মুখে ফেলার কৌশল হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা।
প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে কি দিল্লি শেখ হাসিনাকে সামনে আনছে এখন?

শেখ হাসিনা মনে করিয়ে দিতে চেয়েছেন, কীভাবে তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার দ্রুততম বর্ধনশীল অর্থনীতিগুলোর একটিতে পরিণত হয়েছিল, নারীর ক্ষমতায়ন, দারিদ্র্য হ্রাস ও অবকাঠামো উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জনের কথাও ওঠে এসেছে তার লেখনিতে।
বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এসব সাফল্যের কৃতিত্ব দিতে চেয়েছেন দেশটির সাধারণ মানুষজনকে। তার ভাষায়, “এই কৃতিত্ব রাজনীতিবিদদের নয়, সাধারণ বাংলাদেশিদের।”
দ্য উইক একটি শীর্ষস্থানীয় ইংরেজি সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন, যা ভারত ছাড়াও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইস্যুতে বিস্তৃত কভারেজ দেওয়ার ক্ষেত্রে মুন্সিয়ানার সাক্ষর রেখে আসছে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করেন, নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার গণমাধ্যমকে স্তব্ধ করে দিচ্ছে। তাছাড়া তার রাজনৈতিক সহযোগীদের কারাবন্দি করছে এবং সংখ্যালঘু ও বিরোধী কণ্ঠের ওপর ভীতি সৃষ্টি করছে।
শেখ হাসিনার ভাষায়, “ভয় থেকে গণতন্ত্র জন্মায় না, আর আমি যে বাংলাদেশকে চিনি, তা ভয়ের ভিত্তিতে গড়ে ওঠেনি।”
তিনি সতর্ক করে বলেন, “জনগণের ম্যান্ডেট নেই এমন কোনো রাষ্ট্রপ্রধানের হাত ধরে সত্যিকারের গণতন্ত্র কখনোই টিকে থাকতে পারে না।“
“বাংলাদেশ এখন এমন একদল জবাবদিহিতাহীন অভিজাতের হাতে, যারা মুখে মুখে গণতন্ত্রের কথা বলে, অথচ পুরো দেশ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য ব্যাকুল হয়ে আছে।“
বর্তমান পরিস্থিতিকে তিনি আখ্যা দেন “ব্যালটের প্রতি জনগণের আস্থার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা” হিসেবে।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী দাবি করেন, আসলে দেশ পরিচালনার হাল ইউনূসের হাতে নেই।
তিনি যুক্তি দিয়ে বলেন, “…সত্য হলো ড. ইউনূসের হাতে বাস্তবে কোনও নিয়ন্ত্রণে নেই। হিযবুত তাহরীরের মতো পরিচিত সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ইসলামপন্থী গোষ্ঠীগুলোকে নাগরিক জীবনে শেকড় গাড়তে দেওয়া হয়েছে, যারা তাদের উগ্রপন্থী কঠোর মতাদর্শ ছড়িয়ে দিচ্ছে এবং সমাজের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ মানুষদের দমন করতে চাইছে।”
তবুও তিনি আশাবাদী যে দেশ, যা তার ভাষায় “গণতান্ত্রিক সততা, সাংবিধানিক স্বাধীনতা ও মৌলিক মানবাধিকারের জন্য এক সন্ধিক্ষণে লড়াই করছে।”
বাংলাদেশে আবারও “সত্যিকারের গণতন্ত্রের উত্তরণ হবে” বলেও লিখেছেন ৫ আগস্টে আন্দোলনের মুখে ভারতে আশ্রয় নেওয়া চার বারের প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।
শেখ হাসিনার মূল লেখাটি দ্য উইকের ১৬ নভেম্বর সংস্করণে রাখা হয়েছে, যেখানে তার দল ও পরবর্তী পরিকল্পনাসহ সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়ে তার মতামত তুলে ধরেছেন।
এ সম্পর্কিত আরও খবর:



