আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরবর্তী বাংলাদেশে যখন ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠার দাবিতে রাজপথে প্রকাশ্য সমাবেশ হচ্ছে, তখন এনিয়ে কঠোর বার্তা এল যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা প্রধান তুলসি গ্যাবার্ডের কাছ থেকে।
তিনি বলেছেন, বাংলাদেশে ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদের উত্থান এবং সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।
সোমবার এনডিটিভি ওয়ার্ল্ডকে বাংলাদেশ পরিস্থিতি, জঙ্গিবাদের উত্থান এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন দেশটির জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক।
ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী ‘ইসলামী সন্ত্রাসবাদ’কে পরাস্থ করতে ট্রাম্প প্রশাসনের গভীর দৃষ্টি রয়েছে এবং তাদের সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
ইউএস ডিরেক্টর অব ন্যাশনাল ইন্টিলিজেন্সের (ডিএনআই) পরিচালকের দায়িত্ব নেওয়ার পর মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে যোগ দিয়ে এবার ভারতে এসেছেন তুলসি।
দিল্লিতে অন্তত ২০টি দেশের নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের এক বৈঠকে যোগ দেন তুলসি। পাশাপাশি রাইসিনা সংলাপেও তার অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে।
এনডিটিভি ওয়ার্ল্ডকে দেওয়া ওই একান্ত সাক্ষাৎকারে এই গোয়েন্দা প্রধান তুলসী বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে ধর্মীয় সংখ্যালঘু বিশেষকরে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান এবং অন্যদের ওপর দুর্ভাগ্যজনক নিপীড়ন, নির্যাতন এবং হত্যার মতো ঘটনাগুলো মার্কিন সরকার এবং রাষ্ট্রপতি ট্রাম্প এবং তার প্রশাসনের জন্য অন্যতম প্রধান উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের মাত্রা যেমন বেড়েছে, তেমনি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে ইসলামী জঙ্গগোষ্ঠী। দেশটিতে নিষিদ্ধ এমন সংগঠনও রীতিমতো ঘোষণা দিয়ে মাঠে নামছে, করছে মিছিল-সমাবেশ।
গত ৫ থেকে ৭ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকা এমন বহু স্থাপনা, ভাস্কর্য গুঁড়িয়ে দেওয়ার সময়ও দেখা গেছে তাদের সরব উপস্থিতি, ওড়ানো হয়েছে নিষিদ্ধ হিযবুত তাহরীর ও আইএসের পতাকা।

আগে থেকে সোশাল মিডিয়ায় কর্মসূচির ডাক দিয়ে ৭ মার্চ ঢাকার বুকে ‘মার্চ ফর খিলাফত’-এর দাবি নিয়ে মিছিল-সমাবেশও করে হিযবুত তাহরীর।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে নতুন মন্ত্রিসভা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে এসব বিষয়ে আলোচনা শুরু করেছে বলে জানান তুলসি গ্যাবার্ড।
বাংলাদেশে ইসলামী চরমপন্থা এবং সন্ত্রাসবাদের উত্থান সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে তুলসি গ্যাবার্ড বলেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নতুন মন্ত্রিসভা এবং বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে আলোচনা সবেমাত্র শুরু হচ্ছে। বিষয়টি এখনও আমাদের উদ্বেগের কেন্দ্রেই আছে।”
সাক্ষাৎকারে তিনি ‘ইসলামী খিলাফতের’ আদর্শ, বিশ্বব্যাপী চরমপন্থী উপাদান এবং সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলি কীভাবে লক্ষ্যে পৌঁছুতে কাজ করে- তা নিয়েও কথা বলেছেন।

৪৩ বছর বয়সী তুলসি গ্যাবার্ড বলেন, “ইসলামী সন্ত্রাসবাদের হুমকি এবং বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা তাদের বিভিন্ন গোষ্ঠী কিন্তু একই আদর্শ এবং লক্ষ্যে পরিচালিত, যা হলো একটি ইসলামী খিলাফতের শাসন প্রতিষ্ঠা করা।
“আর এ ধরনের বার্তা স্পষ্টতই অন্যান্য ধর্মের মানুষকেও প্রভাবিত করে, যাকে তারাও গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচনা করে সন্ত্রাস এবং সহিংস উপায়ে বাস্তবায়নের পথ বেছে নেয়।”
ডোনাল্ড ট্রাম্প এই ‘উগ্র ইসলামী সন্ত্রাসবাদের’ উত্থান রোধ এবং সমূলে উৎপাটনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বলেও জানান তিনি।
৪৩ বছর বয়সী তুলসি গ্যাবার্ড যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদের প্রথম হিন্দু সদস্য। তিনি আমেরিকান সামোয়া অঞ্চলে জন্মগ্রহণকারী যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নাগরিক হিসাবেও কংগ্রেস সদস্য হন। দেশটির সেনাবাহিনীতেও কাজ করেছেন তুলসি গ্যাবার্ড।
এক সময় ডেমোক্রেটিক পার্টিতে ছিলেন তুলসি। ২০২০ সালে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার জন্য জো বাইডেনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ব্যর্থ হন। এরপর ২০২২ সালে তিনি ডেমোক্রেটিক পার্টি ছাড়েন।
গত বছরের আগস্টে তুলসি গ্যাবার্ড আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেসিডেন্ট পদে রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্পকে সমর্থন করেন। এরপর অক্টোবরে উত্তর ক্যারোলাইনায় ট্রাম্পের এক সমাবেশে রিপাবলিকান পার্টিতে যোগদানের ঘোষণা দেন।
এরপর গত জানুয়ারিতে ট্রাম্প প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার পর তুলসিকে ডিএনআই প্রধানের দায়িত্ব দেন। গত ফেব্রুয়ারিতে মোদী যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পর প্রথম বৈঠকটি তুলসির সঙ্গেই করেছিলেন।
এ সম্পর্কিত আরও খবর:
নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন প্রবাসীরা, ‘জঙ্গিবাদ’ নিয়ে ভয়