চীনসহ প্রতিবেশী দুই দেশ– কানাডা ও মেক্সিকোর পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের যে হুমকি এতদিন দিয়ে আসছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, তা এবার কার্যকর করতে চলেছেন তিনি। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, শনিবার থেকেই যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে কানাডা ও মেক্সিকোকে ২৫ শতাংশ এবং চীনকে ১০ শতাংশ হারে শুল্ক দিতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার আগে থেকেই কানাডা, মেক্সিকো ও চীনা পণ্যের ওপর উচ্চ হারে শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়ে আসছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি। দায়িত্ব গ্রহণের দুই সপ্তাহের মধ্যেই শুল্ক আরোপের হুমকিকে বাস্তবে রূপ দিচ্ছেন তিনি।
বিবিসি জানিয়েছে, শুক্রবার কানাডা, মেক্সিকো ও চীনা পণ্যে শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত জানান ৭৮ বছর বয়সী ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে কানাডার পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত হলেও দেশটির তেলের ওপর তা কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হতে পারেও আভাস দিয়েছেন ট্রাম্প, যা আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হতে পারে।
শুক্রবার ট্রাম্প আরও ইঙ্গিত দেন, ভবিষ্যতে তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওপরও শুল্ক আরোপ করার পরিকল্পনা করছেন, কারণ এই জোট যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভালো আচরণ করেনি।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লিভিট বলেন, কানাডা ও মেক্সিকোর ওপর শুল্ক আরোপের কারণ “তারা অবৈধ ফেনটানাইল তৈরি এবং তা আমাদের দেশে বিতরণের অনুমতি দিয়েছে, যা কয়েক কোটি আমেরিকানের মৃত্যুর জন্য দায়ী।”
ট্রাম্প বারবার এও বলেছেন, তার এই পদক্ষেপের উদ্দেশ্য হলো সীমান্ত পেরিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ঢোকা বিপুল সংখ্যক অবৈধ অভিবাসী এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি মোকাবিলা করা।
শুক্রবার হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রেস সেক্রেটারি লিভিট বলেন, “এগুলো ছিল প্রেসিডেন্টের প্রতিশ্রুতি এবং তিনি সেই প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়ন করছেন।”
নির্বাচনী প্রচারণার সময় ট্রাম্প চীনা পণ্যের উপর ৬০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়ে বলেছিলেন, প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিয়েই তিনি তা কার্যকর করবেন। তবে হোয়াইট হাউসে ফেরার প্রথম দিনেই এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার বদলে ট্রাম্প তার প্রশাসনকে বিষয়টি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেন।
২০১৮ সাল থেকেই যুক্তরাষ্ট্রে চীনা পণ্যের আমদানি কমেছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে আরোপিত শুল্কই এর অন্যতম কারণ।
![](https://thesun24.com/wp-content/uploads/2025/02/mexico-canada-usa-flag.jpg)
এর আগে জানুয়ারির শুরুতে চীনের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা সুরক্ষাবাদের বিরুদ্ধে সতর্ক করে বলেছিলেন, ট্রাম্পের ক্ষমতায় ফিরে আসার ফলে বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধের হুমকি নতুন করে শুরু হয়েছে, তবে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাম উল্লেখ করেননি।
সুইজারল্যান্ডের দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামে ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, তার দেশ রপ্তানি বাণিজ্য আরও সম্প্রসারণে আগ্রহী এবং বাণিজ্য নিয়ে এই উদ্বেগ নিরসনে উভয়পক্ষের জন্য লাভজনক একটি উপায় খুঁজছে।
চীন, কানাডা ও মেক্সিকো যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ বাণিজ্য অংশীদার, গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা পণ্যের ৪০ শতাংশই আসে এই তিন দেশ থেকে। ফলে এই তিন দেশের পণ্যে উচ্চ শুল্ক আরোপ একটি বড় বাণিজ্য যুদ্ধের সূচনা ঘটাতে এবং যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিতে বড় ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
শুক্রবার ডোনাল্ড ট্রাম্প শুল্ক আরোপের বিষয়ে তার সিদ্ধান্ত জানানোর পরপরই এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানান কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। তিনি বলেন, “এটা (উচ্চ শুল্ক) আমরা চাই না, তবে তিনি (ট্রাম্প) যদি এগিয়ে যান, আমরাও ব্যবস্থা নেব।”
কানাডা ও মেক্সিকো ইতোমধ্যে বলেছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের জবাবে নিজেদের মতো করে পদক্ষেপ নেবে। একইসঙ্গে ওয়াশিংটনকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করবে যে, তারা সীমান্ত নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ মোকাবিলায় পদক্ষেপ নিচ্ছে।