ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট দেশ ছাড়েন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশ ছাড়ার আগে ও পরে একাধিকবার তিনি দাবি করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের অর্থায়নে পরিচালিত সংস্থার যোগসাজসেই তাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছে।
শেখ হাসিনার দাবি এতদিন পর্যন্ত শুধু রাজনৈতিক অভিযোগ হিসেবে ভাবা হলেও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক কর্মকর্তা মাইক বেনজ বিষয়টি নিয়ে খোলাখুলি কথা বলার পর তা নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা।
আর এর মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে বিদেশি রাষ্ট্রে সরকার পরিবর্তনে ভূমিকা রাখতো তা ক্রমেই সামনে আসছে।
ঘটনার সূত্রপাত মূলত যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দিয়ে শুরু। তিনি শপথ নেওয়ার পরেই নির্বাহী আদেশ দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সব ধরনের বিদেশি সহায়তা স্থগিত করে দেন। স্থগিত হওয়া এসব তহবিলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আসে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডির নাম।
ইউএসএআইডির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বেশি বিদেশি সহায়তা দিতো। আর এই সংস্থাটির বিরুদ্ধেই আছে বিদেশি সরকার পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার মতো অভিযোগ। শুধু বাংলাদেশ নয়, একাধিক দেশে সরকার পরিবর্তনের পেছনে আছে ইউএসএআইডির ভূমিকা, এমনটা বলছেন অনেকেই।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের সাবেক কর্মকর্তা মাইক বেনজ অভিযোগ করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ভারত ও বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে হস্তক্ষেপ করেছে। তারা মিডিয়া প্রভাব, সোশাল মিডিয়া সেন্সরশিপ এবং বিরোধী আন্দোলনগুলোর অর্থায়নের মাধ্যমে এই হস্তক্ষেপ করেছে।
বেনজের মতে, যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত এজেন্সিগুলো গণতন্ত্র প্রচারের নামে নির্বাচন প্রভাবিত, সরকার অস্থিতিশীল এবং বিদেশি সরকারগুলোকে ওয়াশিংটনের কৌশলগত স্বার্থের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে কাজ করেছে।
তিনি অভিযোগ করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতির কিছু অংশে ইউএসএআইডি, থিঙ্ক ট্যাঙ্ক এবং বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো রয়েছে। ভারতের ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও বিজেপির বিপক্ষে অনলাইন আলোচনা প্রভাবিত করেছে।
তার দাবি, এই গ্রুপগুলো একত্রিত হয়ে নির্বাচনী ন্যারেটিভ তৈরি করতে কাজ করেছে। এসব গ্রুপ বলার চেষ্টা করেছে যে, মোদির রাজনৈতিক সফলতা মূলত ভুয়া তথ্যের ফল, এবং এটি ব্যাপক সেন্সরশিপের ভিত্তি তৈরি করেছে।
বেনজ আরও দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করতে চেয়েছিল, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারকে দুর্বল করতে। বাংলাদেশ এবং চীনের মধ্যে বৃদ্ধি পাওয়া অর্থনৈতিক ও কৌশলগত অংশীদারত্বের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকরা এটিকে তাদের আঞ্চলিক প্রভাবের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছিলেন।
বেনজের উদ্ধৃত করা ফাঁস হওয়া নথি অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র-অর্থায়িত সংস্থাগুলি যেমন এনইডি (ন্যাশনাল এনডাওমেন্ট ফর ডেমোক্র্যাসি) এবং এর সহযোগীরা বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার পরিকল্পনা চালিয়েছে। এই কৌশলগুলোর মধ্যে ছিল আন্দোলনকারী সংগ্রহ, সংখ্যালঘু গোষ্ঠীদের সক্রিয় করা এবং সাংস্কৃতিক ও জাতিগত উত্তেজনা ব্যবহার করে সমাজে বিভাজন সৃষ্টি করা।
একটি অস্বাভাবিক অভিযোগ হলো, যুক্তরাষ্ট্রের করের টাকা ব্যবহার করে বাংলাদেশি র্যাপ সঙ্গীতের জন্য অর্থায়ন করা হয়েছিল, যা সরকারবিরোধী মনোভাব প্রচারের উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছিল। বেনজ দাবি করেন, এই গানগুলো কৌশলে ছাত্র ও যুব আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে তৈরি করা হয়েছিল, যাতে বড় ধরনের বিক্ষোভ সৃষ্টি করা যায়।
তিনি দাবি করেন, এই গোষ্ঠীগুলো তাদের কৌশল বাস্তবায়ন করতে থিঙ্ক ট্যাঙ্ক, মিডিয়া অংশীদারত্ব এবং সোশাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের একটি নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে। আর এটি তারা কখনও রাজনৈতিক নেতৃত্বের সরাসরি তত্ত্বাবধান ছাড়াই করে।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নে পরিচালিত এসব সংস্থার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ অতীতেও ছিল। এসব সংস্থা মঙ্গোলিয়ায় (১৯৯৬), হাইতিতে (২০০১) ও উগান্ডায় (২০২১) সরকার পরিবর্তনে যুক্ত ছিল। ধারণা করা হয়, এসব কর্মকাণ্ডের পেছনে ছিল ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই)।
আইআরআই মূলত এনইডি ও ইউএসএআইডির বৃহত্তর লক্ষ্য বাস্তবায়ন করছিল। এর একটি উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের বিষয়ে ভারতের কথিত হস্তক্ষেপ মোকাবিলা করা।
এনইডি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মতো আইআরআইকেও অনুদান দেয়, যার লক্ষ্য গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও প্রক্রিয়া শক্তিশালী করা। এটি একটি বেসরকারি অলাভজনক সংস্থা।
যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের তহবিলের ওপর নির্ভরশীল প্রতিষ্ঠানটি ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে হলেও এটি প্রতিবছর দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অর্থ সহায়তা পায়। অন্যদিকে ইউএসএআইডি একটি সরকারি সংস্থা। এটি বিদেশি সহায়তা ও উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে।

দ্য সানডে গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালের মার্চে আইআরআই যখন ইউএসএআইডি ও এনইডির কাছ থেকে অনুদান পায়, তখন থেকেই শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে সরানোর প্রকল্প শুরু হয়। এই কর্মসূচির নাম ছিল “প্রোমোটিং অ্যাকাউন্টিবিলিটি, ইনক্লুসিভিটি, অ্যান্ড রিসিলিয়েন্সি সাপোর্ট প্রোগ্রাম” (পিএআইআরএস)। এই প্রকল্পটি টানা ২২ মাস চলে এবং ২০২১ সালের জানুয়ারিতে শেষ হয়।
এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের নাগরিকদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ বাড়ানো এবং কর্তৃত্ববাদবিরোধী কণ্ঠকে শক্তিশালী করা। সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয় তুলে ধরতে শিল্পী, সংগীতশিল্পী ও অন্যদের জন্য অ্যাডভোকেসি অনুদান দেওয়া হয়। এসব কার্যক্রম প্রায় ৪ লাখ দর্শক-শ্রোতা অর্জন করে। সিভিল সোসাইটির বিভিন্ন সংগঠন এই তথাকথিত উদ্যোগকে সমর্থন দেয় এবং কর্মী ও নাগরিকদের চিহ্নিত করে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, যাতে তারা নীতিগত দাবি উত্থাপন করতে পারে।
এছাড়া শেখ হাসিনা সরকারকে অস্থিতিশীল করতে কভিড-১৯ মহামারির সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। তবে পরিকল্পনা অনুযায়ী ফল মেলেনি। কারণ মৃত্যুহার কম ছিল এবং অর্থনীতি দ্রুত পুনরুদ্ধার হয়।
একই ধরণের আরেকটি প্রকল্প ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পরিচালিত হয়। এতে এনইডি মোট ৯ লাখ ডলারের অনুদান দেয়।
এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল রাজনৈতিক আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে যুবক ও নারীদের কণ্ঠকে শক্তিশালী করা। আইআরআই নারী রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, জনপ্রতিনিধি এবং সম্ভাব্য প্রার্থীদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে কাজ করে, যাতে তারা ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে। এছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রনেতাদেরও এই কার্যক্রমের আওতায় আনা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট নথিতে আওয়ামী লীগের কথিত দুর্নীতির জন্য ভারতকে দায়ী করা হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয় যে শেখ হাসিনা পুনঃনির্বাচনে ভারতের সমর্থন নেবেন। এছাড়া ছাত্রনেতাদের সঙ্গে গোলটেবিল আলোচনা আয়োজন করা হয়, যেখানে আওয়ামী লীগের কথিত দুর্নীতি নিয়ে আলোচনা করা হয়।
প্রতিবেদনে ঢাকায় সরকার পরিবর্তন অভিযানের তদারকিতে যুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তারা হলেন— সাউথ এশিয়া সাবকমিটির সদস্য ক্রিস মারফি (ডি-সিটি), ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক পরিচালক সুমনা গুহ, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু, সারা মারগন এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা (ইএপি) ফ্রান্সিসকো বেঙ্কোসমে, তিনি অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালে থাকাকালীন বাংলাদেশ বিষয়ে কাজ করেছেন।
পিএআইআরএস কর্মসূচি বহুমুখী কৌশল গ্রহণ করে, যা বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় পরিচালিত অন্যান্য আন্দোলনের মতো ছিল। এতে জামায়াতে ইসলামীসহ কিছু ধর্মীয় উগ্রপন্থী সংগঠন এবং যুক্তরাষ্ট্র-অর্থায়িত ‘সিভিল সোসাইটি’ গ্রুপের সঙ্গে সহযোগিতা করা হয়। এর ফলে সহিংস আন্দোলন পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে তোলে।
একই সময়ে, সিভিল সোসাইটি গ্রুপগুলো আন্দোলনের প্রকাশ্য মুখ হিসেবে কাজ করে। এতে যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত রাজনৈতিক দলগুলো অস্থিরতার মধ্যে কৌশলগতভাবে নিজেদের অবস্থান সুসংহত করতে পারে।
এনইডি যুক্তরাষ্ট্রে ও আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক কংগ্রেসম্যান রন পল অভিযোগ করেন, এনইডি জনগণের করের টাকা অপব্যবহার করছে।
তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের অনুগত বিদেশি রাজনীতিকদের সহায়তা দিতে এই অর্থ ব্যয় করা হয়। এটি গণতন্ত্র প্রচারের নামে আসলে বিদেশি নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করছে। এই পদ্ধতিটি ‘সফট মানি’ ব্যবহার করে বিদেশি নির্বাচন প্রভাবিত করছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের আইনের লঙ্ঘন।”

এনইডির বিতর্কিত কার্যক্রম দীর্ঘদিন ধরে সমালোচিত হয়ে আসছে। ১৯৮০-এর দশকে কংগ্রেসম্যান বার্নি ফ্র্যাঙ্ক এনইডির অর্থায়ন কমানোর প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, সরকারের উচিত নয় জনগণের করের টাকা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা। বিশেষ করে, বিদেশি শ্রমিক সংগঠনগুলোকে সহায়তা দেওয়ার জন্য এই অর্থ ব্যয় করা ঠিক নয়।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এনইডি হাইতির গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে দুর্বল করে দেশটির অস্থিরতা বাড়িয়েছে। নিউইয়র্ক টাইমসের সাবেক প্রতিবেদক স্টিফেন কিনজার নিউইয়র্ক রিভিউ অব বুকসে প্রকাশ করেন, এনইডি সিআইএ ও ইউএসএআইডির সঙ্গে মিলে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোকে সহায়তা করে। এসব গোষ্ঠীর লক্ষ্য যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে থাকা সরকারগুলোর পতন ঘটানো। এটি দেখায় যে, এনইডির কর্মকাণ্ড বিদেশি হস্তক্ষেপের ধারাবাহিক অংশ, যা অনেক সময় স্থানীয় গণতন্ত্র ও স্থিতিশীলতার ক্ষতি করে।
বাংলাদেশ ছাড়াও এনইডি বিভিন্ন দেশে কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। ২০২২ সালে এটি তাইওয়ানে ডেমোক্র্যাটিক প্রগ্রেসিভ পার্টির সঙ্গে মিলে একটি গ্লোবাল অ্যাসেম্বলি আয়োজন করে। এর উদ্দেশ্য ছিল তথাকথিত গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোকে একত্রিত করা।
২০২৩ সালের জুলাইয়ে এনইডির প্রেসিডেন্ট ডেমন উইলসন তাইওয়ান ফাউন্ডেশন ফর ডেমোক্রেসির ২০তম বার্ষিকীতে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েনকে ‘ডেমোক্রেসি সার্ভিস মেডেল’ দেয়। এটি দেখায় যে, এনইডি যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের সঙ্গে মিল থাকা রাজনৈতিক আন্দোলনগুলোকে সমর্থন দেয়। তবে এই কার্যক্রম তাইওয়ান ও চীনের মধ্যে উত্তেজনা ও সংঘাতের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
এনইডির অর্থায়ন করা সংগঠনগুলো প্রায়ই অভ্যন্তরীণ সমস্যার মুখে পড়ে। উদাহরণ হিসেবে, উইঘুর মানবাধিকার রক্ষায় কাজ করা ওয়ার্ল্ড উইঘুর কংগ্রেস (ডব্লিউিইউসি) বর্তমানে নেতৃত্ব সংকটে রয়েছে। সংগঠনটির এক নেতার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। এনওটিউএস নিউজ এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করলেও ডব্লিউিইউসি এখনো এই গুরুতর অভিযোগের বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। বর্তমানে সংগঠনটি নেতৃত্ব পরিবর্তনের পর্যায়ে রয়েছে। তবে, অভ্যন্তরীণ বিরোধ দেখা দিয়েছে এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থী অনির্দিষ্ট কারণে অনুপস্থিত রয়েছেন।
এনইডির দাবি, তারা কোনো রাজনৈতিক প্রচারণায় অর্থায়ন করে না। তবে বাস্তবে এটি বিভিন্ন দেশের নির্বাচনে প্রভাব ফেলেছে। নিকারাগুয়া ও মঙ্গোলিয়ায় নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে এনইডি সক্রিয়ভাবে কাজ করেছে। এছাড়া পূর্ব ইউরোপে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারগুলোকে পতন ঘটাতেও ভূমিকা রেখেছে। ভেনেজুয়েলায় এটি বিরোধী দলগুলোকে সহায়তা করেছে।
বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারকে উৎখাতের পেছনে আরও একটি নাম এসেছে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায়।
ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের গত ১০ ফেব্রুয়ারির প্রতিবেদনে বলা হয়, হাঙ্গেরিয়ান-আমেরিকান ধনকুবের জর্জ সরোসের সংগঠনগুলো রাজনৈতিক বিষয়ে প্রভাব বিস্তার ও বিভিন্ন দেশকে অস্থিতিশীল করতে ইউএসএআইডি থেকে ২৬০ মিলিয়ন ডলার পেয়েছে। এসব দেশের মধ্যে ভারত ও বাংলাদেশও রয়েছে।
ট্রাম্প সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র সোশাল মিডিয়া এক্সে অভিযোগ করেছে, “জর্জ সরোস ২৬০ মিলিয়ন ডলার পেয়েছিলেন ইউএসএআইডির কাছ থেকে। এই অর্থ ব্যবহার করা হয়েছে শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, ইউক্রেন, সিরিয়া, ইরান, পাকিস্তান, ভারত, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে অস্থিরতা সৃষ্টি, সরকার পরিবর্তন ও ব্যক্তিগত লাভের জন্য।”

প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ১৫ বছরে ইউএসএআইডি ইউএসএআইডি সরোসের সংগঠনগুলিকে ২৭০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি অর্থ দিয়েছে। এমন একটি সংগঠন, ইস্ট-ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউট, সরোসের ওপেন সোসাইটি ফাউন্ডেশনের সঙ্গে সহযোগিতা করে এবং ইউএসএআইডি থেকে তহবিল পেয়েছে। এই তথ্য প্রকাশের পর আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক আন্দোলনে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ভূমিকা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।
ভারতের শাসক দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) দীর্ঘদিন ধরে সরোসকে বিরোধী দলগুলোকে সমর্থন ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সমালোচকদের অর্থায়ন করার অভিযোগে অভিযুক্ত করে আসছে। বিজেপি নেতারা দাবি করেন, সরোসের উদ্যোগ ভারত সরকারে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির লক্ষ্যে এবং জাতীয় রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করার উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে।
বাংলাদেশ ও ইউএসএআইডি
বাংলাদেশ ২০২২ সালে ৫ দশমিক ১২ বিলিয়ন ডলার সরকারি উন্নয়ন সহায়তা (ওডিএ) পেয়েছে। ইউএসএআইডি ২০২২ সালে ৪৬৯ মিলিয়ন ডলার বিতরণ করেছিল, যা ২০২৪ সালে ৪৪৮ মিলিয়ন ডলারে কমেছে।
ইউএসএআইডি বাংলাদেশের একটি বড় অংশীদার, বিশেষ করে জরুরি খাদ্য সহায়তা (৯৮ দশমিক ৮ মিলিয়ন ডলার), খাদ্য উন্নয়ন (৩৪ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলার) এবং রোহিঙ্গা (২৪ দশমিক ৭ মিলিয়ন ডলার) ক্ষেত্রে।
বাংলাদেশ ২০২৪ সালে ইউএসএআইডি থেকে স্বাস্থ্য কার্যক্রমের জন্য প্রায় ৪০ মিলিয়ন সহায়তা পেয়েছে।
তথ্যসূত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়া, ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস, এক্স, দ্য সানডে গার্ডিয়ান, নিউ ইয়র্ক টাইমস।
এ সম্পর্কিত আরও খবর: