ফিলিস্তিনের পক্ষে দাঁড়িয়ে ট্রাম্পের বক্তৃতায় বাগড়া দেয়া ইসরায়েলি দুই এমপি কারা

ইসরায়েলের পার্লামেন্ট নেসেটে বক্তব্য দেয়ার সময় দুই এমপির প্রতিবাদের মুখে পড়েন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ইসরায়েলের পার্লামেন্ট নেসেটে বক্তব্য দেয়ার সময় দুই এমপির প্রতিবাদের মুখে পড়েন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

আয়মান ওদেহ ও ওফের কাসিফ- নাম দুটি এতক্ষণে অনেকের জানা হয়ে গেছে। দুজনই ইসরায়েলের এমপি। তারা আলোচনায় এখন ইসরায়েলের পার্লামেন্টে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তৃতায় বাগড়া দিয়ে। তবে তার চেয়ে অবাক করা তথ্য হচ্ছে, তারা দাঁড়িয়েছিলেন ফিলিস্তিনের পক্ষে।

ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধবিরতির পর বন্দি বিনিময়ের কৃতিত্ব নিতে ট্রাম্প সোমবার হাজির হয়েছিলেন তেল আবিবে। রাজসিক সংবর্ধনার পর ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু নেসেটে (ইসরায়েলের পার্লামেন্ট) নিয়ে যান ট্রাম্পকে। সেখানে নেতানিয়াহুকে প্রশংসায় ভাসিয়ে বক্তব্য দেন তিনি।

কিন্তু ট্রাম্পের বক্তৃতার সময় ‘ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দাও’ লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে যান আয়মান ওদেহ ও ওফের কাসিফ। তাতে ট্রাম্পের বক্তৃতা থেমে যায়। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে নেসেট থেকে বের করে দেওয়া হয় ওদেহ ও কাসিফকে।

এই দুজনই  ইসরায়েলের বিরোধী দলের সদস্য, যারা অধিকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চল নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর নীতির, বিশেষ করে গাজায় ব্যাপক সামরিক অভিযানের তীব্র সমালোচনা করে আসছেন।

পার্লামেন্ট থেকে বের করে দেওয়ার পর আয়মান ওদেহ পরে এক্সে এক পোস্টে বলেন, “তারা আমাকে নেসেট থেকে সরিয়ে দিয়েছে, কারণ আমি সবচেয়ে সরল দাবিটি তুলে ধরেছিলাম, যে দাবিটির সাথে পুরো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় একমত: একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়া।”

৫০ বছর বয়সী আয়মান ওদেহ একজন আরব মুসলিম পরিবারের সদস্য, তবে নিজেকে নাস্তিক হিসেবে পরিচয় দেন তিনি। তিনি আরব-ইহুদি হাদাশ পার্টির শীর্ষ নেতা। বামপন্থী এই দলটি ইসরায়েলের কমিউনিস্ট পার্টির (মাকি) সঙ্গে জোটে রয়েছে।

৬০ বছর বয়সী ওফের কাসিফ একজন ইহুদি। তিনি ২০১৯ সালের এপ্রিল মাস থেকে নেসেটে হাদাশ পার্টির প্রতিনিধিত্ব করছেন।

ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পক্ষে অবস্থান নেওয়া এমপিদের পার্লামেন্ট থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়।

কাসিফ পরে বলেন, তারা মার্কিন প্রেসিডেন্টের বক্তৃতায় ব্যাঘাত ঘটাতে চাননি, বরং ফিলিস্তিনিদের প্রতি ন্যায়বিচারের দাবিটি জানাতে চেয়েছিলেন।

তিনি হিব্রু ভাষায় ‘এক্স’-এ পোস্ট করেন, “উচ্ছেদ এবং বর্ণবৈষম্যের সমাপ্তি এবং ইসরায়েলের পাশাপাশি একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই কেবল সত্যিকারের শান্তি আসবে, যা এই অঞ্চলের উভয় জনগোষ্ঠীকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করবে। দখলদার হতে অস্বীকার করুন! রক্তপিপাসু সরকারের বিরোধিতা করুন!”

আইনজীবী আয়মান ওদেহ তার কর্মজীবনজুড়ে ইসরায়েলের আরব ও ফিলিস্তিনিদের গণতান্ত্রিক অধিকারের পক্ষে সরব থাকছেন।

তিনি বলে আসছেন, তিনি ইহুদি জনগণের ইসরায়েলে থাকার অধিকারকে সমর্থন করেন, তবে আরব ফিলিস্তিনিদের জন্য একই আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিতে হবে।

২০১৫ সালের নির্বাচনী প্রচারণার সময় তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আভিদডর লিবারম্যান হাদাশ পার্টির ওদেহকে একজন ‘ফিলিস্তিনি নাগরিক’ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন এবং বলেছিলেন, তিনি ইসরায়েলে অবাঞ্ছিত।

উত্তরে ওদেহ বলেছিলেন, “আমি আমার মাতৃভূমিতে খুবই বাঞ্ছিত। আমি প্রকৃতি, চারপাশের পরিবেশ, ভূদৃশ্যের একটি অংশ।”

ওদেহ আমেরিকান নাগরিক অধিকার কর্মী মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রকে তার অনুপ্রেরণার উৎস মনে করেন।

কাসিফ ইসরায়েলি সেনাবাহিনীতে থাকাকালে বিবেকের তাড়নায় ফিলিস্তিনিদের ওপর দমন-পীড়নে অংশ নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। এই কারণে তাকে চারবার জেলেও যেতে হয়েছিল।

সামরিক বাহিনীতে বাধ্যতামূলক কাজ শেষ করার পর তিনি লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্স থেকে রাজনৈতিক দর্শনে পিএইচডি ডিগ্রি নেন। তার থিসিসের শিরোনাম ছিল ‘অন ন্যাশনালিজম অ্যান্ড ডেমোক্রেসি: আ মার্কসিস্ট এক্সামিনেশন’।

তিনি তেল আবিব ইউনিভার্সিটি এবং স্যাপির অ্যাকাডেমিক কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান পড়াতেন।

হাদাশ পার্টি ১৯৬৭ সালের জুন মাসের যুদ্ধে অধিকৃত সমস্ত অঞ্চল থেকে ইসরায়েলের দখল প্রত্যাহার এবং একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের পক্ষে।

সোমবার পার্লামেন্টে আয়মান ওদেহ ও ওফের কাসিফ ফিলিস্তিনের পক্ষে সরব হলে নেসেটের স্পিকার হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে তাদের বহিষ্কার করেন। কর্মকর্তাদের ডেকে বলেন, এই দুজনকে নেসেট থেকে বের করে দিতে।

এসময় বেশ কয়েকজন আইনপ্রণেতা উল্লাস প্রকাশ করেন এবং করতালি দেন। তার মধ্যেই তাদের দুজনকে দরজা দিয়ে বের করে দেওয়া হয়। এদিকে থমকে যাওয়া ট্রাম্প তখন বক্তৃতা পুনরায় শুরু করে বলেন, ঠিক কাজটিই হয়েছে।

তবে এই দুই এমপিই এখন বিশ্বে ফিলিস্তিনের পক্ষে থাকা কোটি কোটি মানুষের প্রশংসায় ভাসছেন।

আরও পড়ুন