বগুড়ায় উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর জাতীয় সংগীত পরিবেশন কর্মসূচিতে হামলা করেছে একদল তরুণ, যাদের কণ্ঠে স্লোগান ঝরছিল ‘বগুড়ার মাটিতে উদীচীর ঠাঁই নেই, ইনকিলাব জিন্দাবাদ।
সম্প্রতি আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধের দাবিতে শাহবাগের আন্দোলন কর্মসূচিতেও একই ঘটনা ঘটেছিল, যা নিয়ে দেশব্যাপী চলছে প্রতিবাদ। সেদিনও জাতীয় সংগীত গাইতে বাধা দেয় একদল তরুণ, পরবর্তীতে যাদেরকে ছাত্র শিবির ও ইসলামী দলের সদস্য হিসেবে সনাক্ত করে প্রত্যক্ষদর্শীরা।
ওই ঘটনার প্রতিবাদেই দেশব্যাপী পালিত হচ্ছে জাতীয় সংগীত পরিবেশন কর্মসূচি।
বুধবার বগুড়ার সাতমাথায় মুক্তমঞ্চে ওই কর্মসূচিতে কারা বাধা দিয়েছেন তা নিয়ে রয়েছে অস্পষ্টতা। কোনো কোনো সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে হামলার ঘটনায় জড়িতরা ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী মঞ্চ’ নামে একটি সংগঠনের সদস্য, আবার এনসিপি, ইনকিলাব মঞ্চ ও ছাত্র শিবিরের নামও এসেছে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম সদর থানার ওসিকে উদ্ধৃত করে বলেছে, উদীচী ও এনসিপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে ওই ‘ঝামেলা’ হয়েছে।
অবশ্য বেসরকারি টেলিভিশন স্টেশন ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভি ইনকিলাব মঞ্চ ও ছাত্র শিবিরের কথা উল্লেখ করলেও কিছুক্ষণের মধ্যে প্রতিবেদনটি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।
প্রথম আলো লিখেছে, সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশন অনুষ্ঠানে ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী মঞ্চ’–এর ব্যানারে একদল তরুণ প্রথমে বাধা দেন। পরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত উদীচীর অনুষ্ঠানে হামলা চালানো হয়। একপর্যায়ে উদীচী বগুড়া জেলা সংসদ কার্যালয়ের ব্যানার ছিঁড়ে ফেলেন তারা।
দ্য সান ২৪কে বগুড়া উদীচীর জেলা সংসদের সাধারণ সম্পাদক শাহিদুর রহমান বিপ্লব জানিয়েছেন, তাদের কর্মসূচিতে যখন বাধা দেওয়া হয়, হামলা করা হয়, তখন পুলিশ সেখানে উপস্থিত ছিল। বারবার তাদের সামনেই এসব হামলার ঘটনা ঘটে।
শুধু ব্যানার ছিঁড়ে ফেলা নয়, বগুড়া উদীচী কার্যালয়েও হামলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
উদীচী জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে মুক্তমঞ্চে সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের আয়োজন করা হয়। বিকেল চারটা থেকেই উদীচীসহ বিভিন্ন সংগঠনের শিল্পীরা মঞ্চে উপস্থিত হন। বিকেল পাঁচটার দিকে কিছুসংখ্যক তরুণ সেখানে জড়ো হয়ে ফ্যাসিস্ট ও তার দোসরদের বিচারের দাবিতে সেখানে বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। একপর্যায়ে তারা সেখানে মাইকও টানিয়ে দেন।
মুক্তমঞ্চে বাধার মুখে পড়ে উদীচীর শিল্পীরা শহরের শহীদ খোকন পার্কে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের চেষ্টা করেন। পরে সেখানে একদল তরুণ হামলা চালায়। হামলার ফলে তাদের অনুষ্ঠান পণ্ড হয়ে যাওয়ায় শিল্পীরা শহরের সাতমাথায় জেলা সংসদ কার্যালয়ে অবস্থান নেন। পরে ওই তরুণেরা সেখানেও হামলা চালায়।
এদিকে ওই ঘটনার ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে, যাতে দেখা গেছে একদিকে উদীচীর শিল্পীরা জাতীয় সংগীত গাইছেন, অন্যদিকে বিক্ষুব্ধ কিছু তরুণ স্লোগান দিচ্ছেন ইনকিলাব জিন্দাবাদ, বগুড়ার মাটিতে ফ্যাসিবাদের ঠাঁই নেই- সহ বিভিন্ন স্লোগান। এক পর্যায়ে পুলিশে সামনেই উদীচীর শিল্পীদের ওপর চড়াও হয় তারা, মারধরের ঘটনাও ঘটে।
ভিডিওতে হামলার আগে পুলিশের সঙ্গে থাকা এক তরুণকে ওই কর্মসূচিতে বাধা দিতে আসা একজনের সঙ্গে কানে কানে কথা বলতে দেখা যায়। এরপরই হামলার ঘটনাটি ঘটে।
ফ্যাসিবাদবিরোধী মঞ্চের সংগঠক মো. সিফাতুল্লাহর একটি বক্তব্য উদ্ধৃত করে সময় টেলিভিশন–র প্রতিবেদনে বলা হয়, আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসরা বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করলে তাদের বাধা দেওয়া হয়েছে।
“তারাই প্রথমে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করে। আমরাও মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করি। তবে যারা ফ্যাসিবাদের আদর্শ লালন করে তাদের কোনো আয়োজন করতে দেয়া হবে না।”
ঘটনার বিষয়ে সদর থানার ওসি মঈনুদ্দিন বলেন, “উদীচী ও এনসিপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে সাতমাথা মোড়ে একটি অনুষ্ঠানে একটু ঝামেলা হয়েছিল। পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় বড় কিছু হয়নি।”
তবে ঘটনার সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করে এনসিপির বগুড়া জেলা সংগঠক আহম্মেদ সাব্বির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরকে বলেন, “হামলার ঘটনায় আমাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। সেখানে ফ্যাসিবাদবিরোধী মঞ্চের সঙ্গে তাদের ঝামেলা হয়েছে।”
বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তফা মঞ্জুরকে বলেন, পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক আছে। হাতাহাতি হয়েছে তবে হামলার ঘটনা সঠিক নয়। এছাড়া অফিসে হামলা করতে আসলে তাদের নিবৃত্ত করা হয়েছে।