ইউনূস সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে আইসিসিতে আওয়ামী লীগ

লন্ডনের ডাউটি স্ট্রিট চেম্বার্সের আইনজীবী স্টিভেন পাওলস কেসি আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এই অভিযোগটি দাখিল করেছেন।
লন্ডনের ডাউটি স্ট্রিট চেম্বার্সের আইনজীবী স্টিভেন পাওলস কেসি আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এই অভিযোগটি দাখিল করেছেন।

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) মানবতাবিরোধী অপরাদের অভিযোগ তুলে মামলার আবেদন করেছে বাংলাদেশে কার্যক্রম নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ।

একজন ব্রিটিশ আইনজীবীর মাধ্যমে দায়ের করা অভিযোগে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে দলটির নেতাকর্মীদের ‘হত্যা, নির্বিচারে গ্রেপ্তারসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের’ অভিযোগ আনা হয়েছে।

লন্ডনের ডাউটি স্ট্রিট চেম্বার্সের আইনজীবী স্টিভেন পাওলস কেসি আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অভিযোগটি দায়ের করেছেন।

মামলার আবেদনে মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে বিগত সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর পরিচালিত ‘প্রতিশোধমূলক সহিংসতার’ বিষয়ে রোম সংবিধির ১৫ নম্বর বিধি অনুযায়ী তদন্ত শুরু করতে আইসিসির কাছে অনুরোধ করা হয়েছে।

গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর এক বছরে সরকারি নিপীড়নে আওয়ামী লীগের অন্তত ৫০০ নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন বলে সম্প্রতি এপি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে অভিযোগে করেছেন শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়।

অবশ্য আইসিসিতে দাখিল করা আবেদনে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের ‘প্রায় ৪০০’ নেতাকর্মীকে হত্যা করার অভিযোগ আনা হয়েছে, যাদের মধ্যে অনেকেই ‘মব সন্ত্রাসের’ শিকার বলে উল্লেখ রয়েছে।

এমন এক সময়ে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আইসিসিতে অভিযোগ করা হল, যখন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা রায়ের তারিখ ঘোষণার অপেক্ষায় রয়েছে।

যদিও আওয়ামী লীগ শুরু থেকেই ওই বিচারকে ‘সাজানো নাটক’ আখ্যায়িত করে আসছে। দিন দুয়েক আগে আদালতের বিচারকার্যের বিরতিতে রাষ্ট্রপক্ষের নিয়োগ করা আইনজীবীর সঙ্গে বিচারকের কথোপকথনের একটি ভিডিও সামনে এলে যা নিয়ে আওয়ামী লীগের অভিযোগ শক্ত ভিত্তি পায়।

নেদারল্যান্ডসের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের নিপীড়ন ও হত্যার বিভিন্ন ঘটনার প্রমাণ হিসেবে ভিডিও ও সাক্ষ্য যুক্ত করে বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে।

ডাউটি স্ট্রিট চেম্বার্সের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, আবেদনে হত্যা, বেআইনি আটক ও নির্যাতনের ঘটনা মানবতাবিরোধী অপরাধের শামিল এবং এর সুষ্ঠু তদন্ত বা বিচার বাংলাদেশে হওয়ার কোনো বাস্তব সম্ভাবনা নেই বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।

এছাড়া আওয়ামী লীগের সঙ্গে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে যুক্ত ব্যক্তিদের ‘অযৌক্তিকভাবে গ্রেপ্তার করে জামিন বা অভিযোগ ছাড়াই কারাগারে পাঠানোর’ অভিযোগ করা হয়েছে সেখানে।

গত কয়েক মাসে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের বিরু্দধ মতের বহু রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী ও সাংবাদিককে গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটেছে, যা নিয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোকেও সরব হতে দেখা গেছে।

আবেদনে বলা হয়েছে, রাজনীতিক, বিচারক, আইনজীবী, সাংবাদিক থেকে শুরু করে অভিনেতা ও সংগীতশিল্পীর মত বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ এই ‘নিপীড়নের’ শিকার হচ্ছেন।

এছাড়া ২০২৪ সালের জুলাইয়ের পর থেকে কারাগারে ‘অন্তত ২৫ জন’ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর মৃত্যুর ঘটনাও সামনে আনা হয়েছে অভিযোগে।

অভিযোগে বলা হয়েছে, সরকারের পক্ষ থেকে মৃত্যুর কারণ হিসেবে ‘হৃদরোগের’ কথা বলা হলেও, তাদের অনেকের শরীরে ‘নির্যাতনের স্পষ্ট চিহ্ন’ পাওয়া গেছে।

আইনজীবী স্টিভেন পাওলস বলেছেন, ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ‘ডেভিল হান্ট’ নামে যে অভিযান শুরু করে, যার ঘোষিত লক্ষ্য ছিল ‘আওয়ামী ফ্যাসিবাদ’ দমন। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত ওই অভিযানে মাত্র ১২ দিনে প্রায় ১৮ হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়।

আইসিসিতে জমা দেওয়া আবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের ১৪ অক্টোবর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি ‘ইমিউনিটি অর্ডার’ জারি করে, যাতে বলা হয়েছিল, “১৫ জুলাই থেকে ৮ অগাস্টের মধ্যে আন্দোলনে যারা ভূমিকা রেখেছেন, তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা, গ্রেপ্তার বা হয়রানি করা হবে না।”

“এ ধরনের একতরফা দায়মুক্তি শুধু অপরাধীদের পার পাওয়ার সুযোগ তৈরি করে না, বরং এসব হামলার প্রতি রাষ্ট্রের নীরব সমর্থনেরও ইঙ্গিত দেয়।”

এতে আরও বলা হয়, “তদন্তের মাধ্যমে এসব অপরাধের সঙ্গে জড়িত নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের দায় নির্ধারণ সম্ভব হবে। রাজনৈতিক পরিবর্তনের সময় প্রতিশোধমূলক সহিংসতা এখন বৈশ্বিক উদ্বেগের কারণ হয়ে ওঠেছে; এবং এই ধরনের অপরাধ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের এখতিয়ারের মধ্যেই পড়ে।”

এ সম্পর্কিত আরও খবর:

আরও পড়ুন