টেলিগ্রামে ‘চাঁদাবাজি’, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ভারতীয় মিডিয়ায় চাঞ্চল্যকর তথ্য

টেলিগ্রামে চাঁদাবাজি নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে নিউজ এইটিন। ছবি কোলাজ: দ্য সান ২৪
টেলিগ্রামে চাঁদাবাজি নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে নিউজ এইটিন। ছবি কোলাজ: দ্য সান ২৪

বাংলাদেশে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের আত্মগোপনে থাকা নেতাদের বিরুদ্ধে ‘অভিনব’ চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলে খবর প্রকাশ করেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘নিউজ এইটিন’। চাঁদাবাজির শিকার বাইরের কোনো ব্যক্তি নয়, বরং নিজ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। আর অভিযোগের তীর খোদ দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বিরুদ্ধে।

অবশ্য দ্য সান ২৪ এর কাছে ওবায়দুল কাদের দাবি করেছেন, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ শুধু বানোয়াটই নয়, সম্পূর্ণ ‘গাঁজাখুরি’ গল্প।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আর্থিক সুবিধা নিয়ে নেতাকর্মীদের টেলিগ্রাম গ্রুপগুলোতে অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা বাহিনীকে অনুপ্রবেশের সুযোগও দেওয়া হচ্ছে।

ইংরেজিতে প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, দলটিকে নিষিদ্ধ করার ঘটনায় নেতাকর্মীরা যতোটা না অবাক হয়েছেন, তার চেয়ে বেশি অবাক হয়েছেন ‘টেলিগ্রামে’ ‘চাঁদাবাজির’ ঘটনায়।

টেলিগ্রাম আর দশটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মতো হলেও এর নিরাপদে তথ্য আদান-প্রদানের জন্য এটি বেশ জনপ্রিয়।

বাংলাদেশে কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ার পর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন গ্রুপে এই প্লাটফর্মেই আলোচনায় যুক্ত হয়ে আসছেন।

নিউজ এইটিনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতার অভিযোগ তারা পেয়েছেন, যারা দাবি করেছেন, তাদের দলের সাবেক এমপি ও কিছু মন্ত্রী টেলিগ্রামে কোনো অনুষ্ঠান করতে গেলে মোটা অঙ্কের অর্থ চাওয়া হচ্ছে। নতুন নতুন অননুমোদিত টেলিগ্রাম গ্রুপও তৈরি হচ্ছে।

তারা বলছেন, এসব গ্রুপে বাংলাদেশের গোয়েন্দা বাহিনীগুলোকে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে, যার মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করা হচ্ছে।

টেলিগ্রামের কিছু কিছু গ্রুপে ২০ থেকে ৩০ হাজার সদস্য রয়েছেন। এসব গ্রুপে প্রতিদিন দীর্ঘ সময় বৈঠক হয়, যেগুলো শুরু হয় রাত ৯টা থেকে; চলে গভীর রাত পর্যন্ত।

এসব বৈঠকে কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি দলের সাবেক এমপি এবং জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নেতারা অংশগ্রহণ করেন।

আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বরাতে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমটি বলছে, যেসব বৈঠকে শেখ হাসিনা উপস্থিত থাকেন, সেগুলোতেও চাঁদাবাজি চলে। সেখানে দলীয় প্রধানের উপস্থিতিতে কারা কারা বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ পাবেন, সেটার জন্য টাকা লেনদেন হয়।

এজন্য কেউ কেউ দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের দিকে ইঙ্গিত করেছেন, যিনি টেলিগ্রামকে নিজের প্রাথমিক রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম বানিয়েছেন।

অভিযোগ তোলা ব্যক্তিরা বলছেন, ওবায়দুল কাদের ‘ঢাকা ঘেরাও’ করার মতো গরম গরম বক্তৃতা দিচ্ছেন, কিন্তু তার বক্তব্যে এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো পরিকল্পনা বা নির্দিষ্ট সময়সীমা আসেনি।

নিউজ এইটটিনের খবরে বলা হয়, ওবায়দুল কাদের এখন এসব টেলিগ্রাম গ্রুপে বক্তব্য দেওয়ার জন্য নিজের মতো করে সময়সূচি নির্ধারণ করেন।

তবে দলের অনেকেই মনে করেন, তার এসব কর্মকাণ্ড যতটা না কৌশল, তার চেয়ে বেশি রাজনৈতিক হতাশার বহিঃপ্রকাশ।

টেলিগ্রাম অ্যাপ।

আওয়ামী লীগের একজন জ্যেষ্ঠ নেতা নিউজ এইটটিনকে বলেন, “ওবায়দুল কাদেরকে দলের কর্মীরা প্রত্যাখ্যান করেছেন। টেলিগ্রাম গ্রুপের মাধ্যমে নিজেকে প্রাসঙ্গিক রাখছেন। কিন্তু এগুলো দলের কোনো কাজে আসছে না, বরং আর্থিক প্রতারণার মাধ্যম হয়ে উঠেছে।

“টেলিগ্রামে হাসিনার সঙ্গে বৈঠকের সুযোগ করে দেওয়ার বিনিময়ে দলের জ্যেষ্ঠ নেতা, সাবেক সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার কথা দলের শীর্ষ নেতৃত্ব জেনে গেছে।”

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমটি বলছে, বিষয়টি কেবল সজীব ওয়াজেদ জয়, হাসান মাহমুদ, মোহাম্মদ এ আরাফাত, আসাদুজ্জামান খান কামাল কিংবা মহিবুল হাসানোর মতো নেতাদের জন্যই নয়, এটা দলের প্রধান খোদ শেখ হাসিনার জন্যও উদ্বেগজনক। কারণ ধারণা করা হয়, অনেক গ্রুপে গোয়েন্দা সংস্থার ইউনূসপন্থি লোকজনও অনুপ্রবেশ করে।

নিউজ এইটটিন বলছে, জামায়াত ও বিএনপি থেকে অনুপ্রবেশের ঘটনা আওয়ামী লীগে আগে থেকেই আছে। এর মধ্যে আবার ইউনূস অনুগত গোয়েন্দাদের অনুপ্রবেশের অভিযোগ তুলেছেন দলটির অনেক নেতা।

তারা বলছেন, এসব অনুপ্রবেশকারী কথোপকথন রেকর্ড করছে এবং পরে সেগুলোর ভিত্তিতে নেতাকর্মীদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।

এ ধরনের সন্দেহ কীভাবে তৈরি হলো, সেই প্রশ্নে দলের এক জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, “মাঝে মধ্যে কিছু অশোভন মন্তব্য আসত। ‘ধানমন্ডি ৩২’ এর মতো পরিচিত গ্রুপেও কেন্দ্রীয় নেতাদের বিরুদ্ধে মন্তব্য লেখা হতো, যা আমাদের নজরে আসে।

“এর মধ্যে আবার প্রতিরোধ গড়ে তোলার আলোচনার ভিত্তিতে যখন আমাদের কর্মীদের তুলে নেওয়া হলো, তখন আমরা বুঝতে পারলাম, আমরা যা দেখছি, তার চেয়েও বেশি কিছু ঘটছে।”

শেখ হাসিনা এখন কীভাবে এ সমস্যা মোকাবিলা করতে চান, সেই প্রসঙ্গে নিউজ এইটটিন বলছে, আওয়ামী লীগের নেতাদের বলা হয়েছে, হয় রাজপথে নামুন, নয়তো পদত্যাগ করুন।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, শেখ হাসিনা চান, নতুন নেতৃত্ব আসুক; তারা নতুন চিন্তা ও উদ্যোগ নিয়ে রাস্তায় নামুক। নেতাকর্মীরা শুধু কিবোর্ড যোদ্ধা হয়ে থাকুক, সেটা তিনি চান না।

খবরে বলা হয়, অনেক তথ্য ফাঁস হচ্ছে কিংবা ডার্ক ওয়েবে চলে যাচ্ছে, এমন আশঙ্কা থেকে আওয়ামী লীগের সব টেলিগ্রাম ব্যবহারকারীকে ভিপিএন ব্যবহার করতে বলা হয়েছে।

দলের আরেক জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, “এক বছর হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ জনগণের পক্ষে লড়াই করতে চায়। তাই অচিরেই প্রতিটি জেলা ও মহানগরে ‘প্রতিরোধ কমিটি’ দেওয়া হবে।”

চাঁদাবাজির অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে ভারতে অবস্থানরত ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে কয়েক দফা চেষ্টার পর কথা বলেছে দ্য সান ২৪

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শুরুতে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানালেও এক পর্যায়ে তিনি বলেন, “আমিও একসময় সাংবাদিকতা করেছি। সাংবাদিকতার বেসিক কিছু নিয়মকানুন আছে। লক্ষ্য করে দেখবেন পুরো প্রতিবেদনটিতে কারো নাম উল্লেখ করা হয়নি।

“আচ্ছা ঠিক আছে, তারা যাদের অভিযোগ নিয়ে সংবাদটি তৈরি করেছে বলে দাবি করছে তারা না হয় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে? আমি তো এখানেই আছি।”

ওবায়দুল কাদের ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “এই প্রতিবেদনকে শুধু বানোয়াট বললেও ভুল হবে, গাঁজাখুরি গল্পেরও তো একটা লিমিট থাকে।”

দ্য সান ২৪ আলোচনা দীর্ঘায়িত করার ইচ্ছা পোষণ করলে তিনি বলেন, “অন্য কোনো দিন কথা হবে।”

এ সম্পর্কিত আরও খবর:

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ads