জার্মানিতে নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশটির অর্থনীতি ও অভিবাসন নীতি এখন রাজনীতির ময়দানে। রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহারে ঘুরেফিরে উঠে এসেছে এনিয়ে পরিষ্কার বার্তা।
রক্ষণশীল ক্রিস্টিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন- সিএসইউ’র বার্ষিক সংসদীয় সভায়ও তাদের রাজনৈতিক কৌশল এবং নীতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানেই তারা নির্ধারণ করে নিয়েছেন অভিবাসন নিয়ে কোন পথে তারা এগোবে।
চলতি বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি জার্মানিতে সাধারণ নির্বাচনের ভোটের তারিখ রয়েছে।
আঙ্গেলা মের্কেলের নেতৃত্বাধীন সিডিইউ ২০১৫ সালে অভিবাসন নীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছিল। সেই সময় মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশ সিরিয়ার প্রায় দশ লাখ শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছিল জার্মানি।
২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পরও কয়েক লাাখ ইউক্রেনীয়কে আশ্রয় দেয় তারা।
অবশ্য বিগত সরকার ওশাফ শলৎসের নেতৃত্বাধীন এসপিডি সরকার দেশটির ক্রমবর্ধমান শ্রম-সংকট কাটাতে অভিবাসী আইন বেশ সহজ করে দেয়।
ফলে বলা চলে, গেল এক দশক ইউরোপের অভিবাসীবান্ধব দেশ হিসেবে শীর্ষে ছিল জার্মানি।
তবে এবার বোধহয় আর সেপথে হাঁটছে না জার্মানি। অন্তত সিডিইউর বর্তমান প্রধান ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎস অভিবাসনের বিষয়ে তুলনামূলক কঠোর অবস্থান নেবেন বলেই বিশ্লেষকদের ধারণা। তাদের অভিবাসন পরিকল্পনাও তার পক্ষেই সায় দিচ্ছে।
প্রত্যাবাসনের সংখ্যা বাড়ানো, পারিবারিক পুনর্মিলনের সুযোগ সীমিত করাসহ বিভিন্ন বিষয়ে রক্ষণশীল অবস্থানে যেতে পারে সিডিইউ। একই সাথে ইউরোপীয় ইউনিয়নের আশ্রয়নীতিতেও পরিবর্তন আনতে চায় সিডিইউ, রাজনৈতিক ইশতেহারে এমনটাই ইঙ্গিত মিলেছে।
এমনকি জার্মানির আশ্রয়প্রার্থীদের আবেদন তৃতীয় কোনো দেশ থেকে করার ইচ্ছাও পোষণ করেন দলীয় প্রধান।
সিডিইউর ‘সিস্টার্স পার্টি’ সিএসইউর প্রধানও অভিবাসন নিয়ে তাদের কঠোর অবস্থানের কথা তুলে ধরেছেন।
দলটির প্রধান মার্কুস স্যোডার বলেন, ‘‘সম্প্রতি জার্মানিতে অনিয়মিত এবং নিয়মিত- ব্যাপক মাত্রায় এই দুই ধরনের অভিবাসন হয়েছে৷ এই অবস্থার মৌলিক পরিবর্তন প্রয়োজন।’’
এক গবেষণায় দেখা গেছে, জার্মানিতে আবারো ক্ষমতায় আসতে যাচ্ছে সিডিইউ। আর সিডিইউ যদি ক্ষমতায় আসে তাহলে তাদের বাভারিয়া অঞ্চলের সিস্টার পার্টি সিএসইউ থাকবে তাদের সঙ্গে।
সিডিইউ কিংবা সিএসইউর অভিবাসন সংক্রান্ত পরিকল্পনা থেকে এটি স্পষ্ট যে তাদের দল যদি ক্ষমতায় যায় সেক্ষেত্রে অবৈধ অভিবাসী, অপরাধী এবং সিরীয়দের ফেরত পাঠানোর পথে হাঁটবে তারা।
মার্কুস স্যোডার এরই মধ্যে দ্বৈত নাগরিকত্বের বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করেছেন।
তিনি বলেন, ‘‘একাধিক দেশের নাগরিকত্ব রাখার সুযোগ আমাদের দেশের মৌলিক পরিবর্তন নিয়ে এসেছে৷ আমরা যদি আবারও এটি পরিবর্তন না করি, আগামী ১০-২০ বছরের মধ্যে জার্মানির চিত্র পাল্টে যাবে।”
দ্বৈত নাগরিকেরা কোনো অপরাধে জড়ালে তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়ার পক্ষে অবস্থান সিডিইউর প্রধান ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎস।
জার্মানির রাইন মাইন ইউনিভার্সিটি অব অ্যাপ্লাইড সায়েন্সের গবেষক ম্যাক্সিমিলিয়ান পিশল ডয়েচে ভেলেকে বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অভিবাসনের বিষয়ে একধরনে রক্ষণশীল আলোচনা দেখা যাচ্ছে৷ এই আলোচনায় অভিবাসনকে নিরাপত্তার সাথে যুক্ত করে দেখা হচ্ছে।
২০১৫ সালের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, জার্মানিতে অভিবাসীদের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব ছিল৷ কিন্তু পরিস্থিতি পরিবর্তন হচ্ছে।
তিনি জানান, পুরো ইউরোপেই ডানপন্থী রাজনীতিক দলগুলোর উত্থান দেখা যাচ্ছে৷ জার্মানিতেও একই পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে।
‘‘আমরা সাধারণত প্রত্যাবাসন নিয়েই কথা বলি। কিন্তু জার্মানির নাগরিকত্ব পাওয়া অভিবাসীরাও হুমকির মুখে পড়ছে। যেমন, তারা অপরাধ করলে দেশে ফেরত পাঠানোর কথা বলা হচ্ছে।
“আমার মনে হয়, এটি একটি সমস্যা৷ কারণ, তারা বৈষম্যের শিকার হবেন। তারা সমবসমই হুমকি মধ্যে থাকবে, যা আসলে উদার গণতন্ত্রের জন্য ভাল পরিবেশ নয়।’’