‘রোজা হুর নয়, সম্ভবত ভার্জিনও নয়’ বিস্ফোরক মন্তব্য তসলিমার

রোজা ও তাহসানকে নিয়ে তসলিমার বিস্ফোরক মন্তব্য সামাজিক মাধ্যমে।
রোজা ও তাহসানকে নিয়ে তসলিমার বিস্ফোরক মন্তব্য সামাজিক মাধ্যমে।

তাহসান-রোজার বিয়ে এখন ‘হটকেক’। অনেকেই বলছেন তাহসান ভাগ্যবান! অনেকেই আবার তাহসানের প্রাক্তন স্ত্রী রফিয়াৎ মিথিলাকে টেনে এনে করছেন কুৎসা। একই সঙ্গে রোজা ও তাহসানের বয়সের ফারাক নিয়েও চলছে বিস্তর আলাপ।

এ সব নিয়েই যখন চলছে নানা মতের লেনদেন, ঠিক তখনই মুখ খুললেন তসলিমা নাসরিন, যিনি সব বিষয়েই ‘নোজপোকিংয়ে’ ওস্তাদ। ‘ভার্জিন রোজা’ ও তাহসানের ‘জিতে যাওয়া’ নিয়ে এবার মন্তব্য ঠুকে দিলেন এই আলোচিত ও সমালোচিত লেখক। সামাজিক মাধ্যমে কটাক্ষ থেকে রক্ষা পেলেন না রোজা ও তাহসানও।

তসলিমার বক্তব্য হুবহু তুলে ধরা হল:

“ফেসবুক ছেয়ে গিয়েছে ‘তাহসান জিতেছে তাহসান জিতেছে’ রবে। কেন তাহসান জিতেছে, বুঝে পেলাম না। সে একটা মেয়েকে বিয়ে করেছে বা করতে যাচ্ছে। এর মধ্যে জেতাজেতির কী হলো!”

এরপরই তিনি লিখেছেন, “হেটারোসেক্সুয়ালদের বিপরীত লিঙ্গে আকর্ষণ থাকে, তারা জীবনের কোনও এক সময় পছন্দসই কাউকে পেলে তার সঙ্গে প্রেম করে, লিভ ইন করে বা তাকে বিয়ে করে। এ তো স্বাভাবিক। জিতলো কেন তাহলে তাহসান? আসলে যারা জিতেছে জিতেছে বলে চেঁচাচ্ছে, তারা চেঁচাচ্ছে কারণ তারা মনে করেছে তাহসান এক বাচ্চার বাবা হয়েও, ডিভোর্সী হয়েও একটা ‘কচি সুন্দরী ভার্জিন মেয়ে’ পেয়েছে।”

স্বভাবসুলভ মন্তব্য করেছেন মর্ত্য, হুর, নারী সঙ্গমের বিষয়েও।

তসলিমা লিখেছেন, “মর্ত্যে বসে যত খুশি এবং যেভাবে খুশি নারী ভোগ করার পর স্বর্গে গিয়ে সঙ্গমের জন্য ভার্জিন হুর পেয়ে যাওয়াকে মুসলমানরা ‘জিতে যাওয়াই’ মনে করে। কিন্তু রোজা আহমেদ রক্ত মাংসের মানুষ, হুর নয়, খুব সম্ভবত ভার্জিনও নয়। রাজকন্যার জীবন তার ছিল না, খুব স্ট্রাগল করেছে জীবনে। দারিদ্রের বিরুদ্ধে দীর্ঘ দীর্ঘ দিন সংগ্রাম করে একটি মেয়ে নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছে। কঠিন সংগ্রামের দিনগুলোয় নিজের লক্ষ্যে স্থির ছিল বলে, নিজের স্বপ্ন যে করেই হোক পূরণ করতে চেয়েছিল বলে নারীবিদ্বেষী সমাজ রোজাকে কম নিন্দে করেনি, কম অপমান করেনি, কম অপদস্থ করেনি। মিথিলার বিরুদ্ধেও কম কুৎসা রটায়নি এই সমাজ।

“তাহসান জিতেছে, এই নিয়ে সবাই উল্লাস করছে। নারীবিদ্বেষী সমাজে সব পুরুষই জেতে। সর্বক্ষণ জেতে। তাদের হার নেই। হারতে হয় শুধু নারীকেই। কিন্তু আমি কি মনে করি মিথিলা বা রোজা হেরেছে? না। তারা একটুও হারেনি। তারা পুরুষতান্ত্রিক সমাজের প্রথা ভেঙ্গে নিজের যোগ্যতায় স্বর্নিভরতা এবং স্বাধীনতা অর্জন করেছে — নারীবিদ্বেষী সমাজে নারীর জিতে যাওয়ার প্রথম শর্তই এটি। তারা ভ্রুক্ষেপ করছে না কুৎসা বা নিন্দে, এ জিতে যাওয়ার দ্বিতীয় শর্ত। ভাল না লাগলে তারা তাদের সঙ্গীকে, সে প্রেমিক হোক, সে স্বামী হোক, ত্যাগ করতে পারছে, তারা বাধ্য নয় তাদের সঙ্গে এক ছাদের তলায় বাস করতে, জিতে যাওয়ার এটি তৃতীয় শর্ত। স্বামীর আচার ব্যবহার যদি পছন্দ না হয় রোজার, তার স্বনির্ভরতাই তাকে সাহস জোগাবে স্বামীকে ত্যাগ করার, মাথা উঁচু করে একা বাঁচার। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে পুরুষের জেতা কোনও চ্যালেঞ্জ নয়। নারীর জন্যই এ চ্যালেঞ্জ। দুই নারীই তিন শর্তের চ্যালেঞ্জে জিতেছে। চ্যালেঞ্জহীন জয়ের চেয়ে চ্যালেঞ্জপূর্ণ জয় ঢের বেশি গৌরবময়। জয়তু নারী।”

রোজা বয়সে তাহসানের থেকে অনেকটাই ছোট। ১০ বছরের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে ও যুক্তরাষ্ট্রে ব্রাইডাল মেকআপ আর্টিস্ট হিসেবে কাজ করছেন রোজা। পড়াশোনা নিউইয়র্কে। পড়াশোনা শেষ করে তিনি কসমেটোলজি লাইসেন্স অর্জন করে পরবর্তী সময়ে নিউইয়র্কের কুইন্সে রোজাস ব্রাইডাল মেকওভার প্রতিষ্ঠা করেন। সামাজিক মাধ্যমেও বেশ জনপ্রিয় রোজা।

আরও পড়ুন