ফেব্রুয়ারিতে কারা হেফাজতে ১৪ জনের মৃত্যু

প্রতীকী ছবি।
প্রতীকী ছবি।

ফেব্রুয়ারিমাসে কারা হেফাজতে নারী বন্দীসহ মোট ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে।

মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ)  প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

এমএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়, কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ৬ জন, কাশিমপুরে কেন্দ্রীয় কারাগারে ১ জন, যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে ১ জন, সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে ১ জন, গাজীপুর জেলা কারাগারে ১ জন, নওগাঁ জেলা কারাগারে ১ জন, রাজবাড়ী জেলা কারাগারে ১ জন নারী, খুলনা জেলা কারাগারে ১ জন ও রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে রান্না করার সময় গরম পানিতে পড়ে এক বন্দীর মৃত্যু হয়েছে।

গত জানুয়ারি মাসে এর সংখ্যা ছিল ৮ জন।

অপারেশন ডেভিল হান্ট

দেশে চলমান অপারেশন ডেভিল হান্টে ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পযন্ত ১১ হাজার ৩১৩ জন গ্রেপ্তার হয়েছে। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের বেশির ভাগই বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের দলীয় লোকজন।

এমএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে সন্ত্রাসবাদ দমন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ও সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনতে যৌথ বাহিনীর সমন্বয়ে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ নামে বিশেষ অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে গাজীপুরসহ সারা দেশে এই অভিযান শুরু করা হয়।

৭ ফেব্রুয়ারি রাতে গাজীপুরে সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট চালাতে গিয়ে হামলার শিকার হন ১৫ থেকে ১৬ শিক্ষার্থী। এরপরই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর সমন্বয়ে অপারেশন ডেভিল হান্ট পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

পুলিশ সদর দপ্তর থেকে দেওয়া তথ্য অনুসারে, অপারেশন ডেভিল হান্ট শুরু হওয়ার পর ৮ ফেব্রুয়ারি রাত থেকে শুক্রবার এ অপারেশনের আওতায় পর্যন্ত মোট ১১ হাজার ৩১৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া অপারেশন ডেভিল হান্টের পাশাপাশি বিভিন্ন নতুন ও পুরোনো মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে ২০ হাজার ৩৭২ জন।

এমএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়, ৮ ফেব্রুয়ারি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের গাজীপুরের আহ্বায়ক আবদুল্লাহ মোহিত বাদী হয়ে গাজীপুর সদর থানায় মামলা করেন। মামলায় ২৩৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ২০০ থেকে ৩০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার প্রধান আসামি আমজাদ হোসেন মোল্লা নামের আওয়ামী লীগের এক কর্মী।

রাজনৈতিক সহিংসতা

এমএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ মাসে রাজনৈতিক অন্তর্দ্বন্দ্ব বিশেষ করে নিজদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারের দ্বন্দ্ব অনেকাংশে বেড়েছে। বিএনপির দলীয় কর্মীদের অন্তর্দ্বন্দ্ব লক্ষণীয়ভাবে বেড়ে যাওয়ায় হতাহতের ঘটনা ঘটেই চলেছে, যা জনমনে নিরাপত্তহীনতা, ভীতি ও আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে।

ফেব্রুয়ারিতে রাজনৈতিক সহিংসতার ৩৯টি ঘটনায় সহিংসতার শিকার হয়েছেন ৩৯৩ জন। তাদের মধ্যে ৩ জন নিহত এবং ৩৯০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে ১ জন গুলিবিদ্ধ অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন। নিহত ব্যক্তিরা ৩ জন বিএনপির কর্মী ও সমর্থক।

এ ছাড়া নবাবগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজাদুল ইসলাম হাই পান্নু গত ৮ জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত নিখোঁজ রয়েছেন।

সহিংসতার ৩৯টি ঘটনার মধ্যে বিএনপির অন্তর্দ্বন্দ্বের ৩৩টি, আওয়ামী লীগের অন্তর্দ্বন্দ্ব ২টি, বিএনপি-আওয়ামী লীগের সংঘর্ষের ৪ টি ঘটনা ঘটেছে।

এর পাশাপাশি দুষ্কৃতকারীদের দ্বারা রাজনৈতিক দলগুলোর নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার ১২টি ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৬ জন এবং আহত হয়েছেন ৪৩ জন।

এদের মধ্যে দুর্বৃত্তদের হাতে নিহত ৩ জন, হাত-পা বাঁধা অবস্থায় লাশ উদ্ধার ২ জন এবং ১ জনের লাশ মাঠ থেকে পাওয়া গেছে। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ৪ জন আওয়ামী লীগ ও ২ জন বিএনপির নেতা-কর্মী।

আরও পড়ুন