তাহলে কি আপনি ‘ব্রেইন রটে’ আক্রান্ত?

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

কিছু না বুঝেই ইনস্টাগ্রাম, রিল এবং টিকটকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্যয় করছেন? তাই যদি হয়, তাহলে আপনি ‘ব্রেইন রট’ (পচা মস্তিষ্ক?) নামের সমস্যায় ভুগছেন!

মজার বিষয় হচ্ছে, অক্সফোর্ড অভিধানের এই ‘ব্রেইন রট’ শব্দটি সম্প্রতি অক্সফোর্ড অব দ্য ইয়ার হয়েছে।

অনলাইনে মাত্রাতিরিক্ত নিম্নমানের কনটেন্ট দেখা যখন উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছে, সেই পরিস্থিতি বোঝাতে মূলত এই শব্দবন্ধটি ব্যবহার করা হয়।

আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, ২০২৩ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে এই শব্দটির ব্যবহার ২৩০ শতাংশ বেড়েছে। বোঝাই যাচ্ছে, মানুষের ইন্টারনেট আসক্তি কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে। 

‘আমরা যে সময়ের মধ্যে বসবাস করছি, তারই লক্ষণ এটি’- বর্তমান পরিস্থিতি এক বাক্যে এভাবেই বোঝানোর চেষ্টা করেছেন মনোবিজ্ঞানী এবং অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক অ্যান্ড্রু প্রজিবিলস্কি।

কী এই ব্রেইন রট?

‘ব্রেইন রট’ দিয়ে একজন ব্যক্তির মানসিক বা বুদ্ধিবৃত্তিক অবস্থার অনুমেয় অবনতিকে বোঝানো হয়, বিশেষত তুচ্ছ বা চ্যালেঞ্জিং নয়, এমন উপাদানের অত্যধিক ব্যবহারের ফলাফলকেই ‘ব্রেইন রট’ দিয়ে বোঝানো হয়।

তবে ইন্টারনেট ব্যবস্থা চালু হওয়ার পরই যে এই শব্দের উৎপত্তি হয়েছে তা কিন্তু নয়, বরং ইন্টারনেট তৈরির অনেক আগে থেকেই এর ব্যবহার। ১৮৫৪ সালে হেনরি ডেভিড থোরিউ তার ‘ওয়ালডেন’ বইয়ে এই শব্দ ব্যবহার করেছেন। 

জটিল সব বিষয়ের অবমূল্যায়নে সমাজে যে প্রবণতা রয়েছে, তিনি তার লেখায় তার সমালোচনা করেছেন। পাশাপাশি কীভাবে তা মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক প্রচেষ্টার অধোগতির কারণ হয়, তাও আলোচনা করেন।

তিনি প্রশ্ন রেখেছেন, “ইংল্যান্ড যখন আলুর পচন নিরাময়ের চেষ্টা করছে, তখন কি মস্তিষ্কের পচন নিরাময়ের কোনো চেষ্টা করবে না, যা ব্যাপক এবং মারাত্মকভাবে বিরাজ করছে?”

এই শব্দটি প্রথমে সোশাল মিডিয়াতে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় ‘জেন-জি’ এবং ‘জেন-আলফা’ গোষ্ঠীকে আকর্ষণ করে। কিন্তু এখন সোশাল মিডিয়ায় প্রকাশিত নিম্নমানের, নিম্ন মূল্যবোধের কনটেন্টগুলোকে বোঝাতে মূলধারার মাধ্যমেও এই শব্দ ব্যবহার হচ্ছে।   

অধ্যাপক প্রজিবিলস্কির ভাষ্য, “ব্রেইন রটের আসলে কোনো প্রমাণ নেই। তবে এটি অনলাইন জগত নিয়ে আমাদের অসন্তুষ্টির বর্ণনায় ব্যবহার হয় এবং এটি এমন একটি শব্দ যা সোশাল মিডিয়াকেন্দ্রীক আমাদের উদ্বেগগুলোকে একত্রিতভাবে বোঝাতে ব্যবহার করতে পারি।”

অক্সফোর্ড ল্যাঙ্গুয়েজেসের প্রেসিডেন্ট ক্যাসপার গ্রাথওহল বলেছেন, “কীভাবে আমাদের ভার্চুয়াল জীবন বিকশিত হচ্ছে, আমাদের পরিচিতি এবং আমরা কী নিয়ে কথা বলব, ইন্টারনেট সংস্কৃতি কীভাবে তা নির্ধারণ করে দিচ্ছে, সেটি গত দুই দশক ধরে অক্সফোর্ড ওয়ার্ড অফ দ্য ইয়ারের দিকে তাকালে আপনি বুঝতে পারবেন।

“ব্রেইন রট ভার্চুয়াল জীবনের বিপদ এবং আমরা কীভাবে আমাদের অবসর সময়কে ব্যবহার করছি, তা তুলে ধরে।”

বিবিসি অবলম্বনে

আরও পড়ুন