‘আইনশৃঙ্খলার এত অবনতি কেন’

newspaper-analysis

বাংলাদেশের প্রধান সংবাদপত্রগুলোতে শনিবার বিভিন্ন বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে প্রধান প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে নতুন দলের আত্মপ্রকাশ থেকে শুরু করে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও অর্থনীতিসহ নানা বিষয় উঠে এসেছে। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক শনিবার কোন সংবাদপত্রে কী শিরোনাম এসেছে।

প্রথম আলো

আত্মপ্রকাশের অপেক্ষায় থাকা শিক্ষার্থীদের নতুন রাজনৈতিক দল নিয়ে শনিবার প্রধান প্রতিবেদন করেছে প্রথম আলো। “নতুন দলের শীর্ষ ছয়টি পদ নিয়ে ‘সমঝোতা’” শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে আত্মপ্রকাশ করতে যাওয়া নতুন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ ছয়টি পদে কারা আসছেন, তা অনেকটাই চূড়ান্ত হয়েছে। দলের সাংগঠনিক কাঠামোতে ‘সমঝোতার’ ভিত্তিতে নতুন দুটি পদও সৃষ্টি করা হচ্ছে। আহ্বায়ক, সদস্যসচিব, মুখপাত্র এবং মুখ্য সংগঠকের পাশাপাশি জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব নামে দুটি পদ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সামনের সারিতে থাকা ছাত্রনেতারাই নতুন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ পদগুলোতে আসছেন। এই দলের আহ্বায়ক পদে নাহিদ ইসলামের মনোনয়ন নিয়ে শুরু থেকেই জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের কারও কোনো আপত্তি ছিল না। সদস্যসচিব হিসেবে কে আসবেন, মূলত তা নিয়ে মতবিরোধ ছিল। সমঝোতার ভিত্তিতে এই পদে আখতার হোসেনের নাম অনেকটাই চূড়ান্ত। তিনি এখন জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব।

কালের কণ্ঠ

বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ক সংস্থা ইউএসএআইডির কার্যক্রম স্থগিত করার প্রভাব নিয়ে শনিবার প্রধান  প্রতিবেদন করেছে কালের কণ্ঠ। ‘এক আদেশে ৩২৭ এনজিওর ১০ হাজার কর্মী বেকার’ শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের প্রায় ৩২৭ বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার (এনজিও) ১০ হাজার কর্মী বেকার হয়ে পড়েছেন। হঠাৎ চাকরি হারিয়ে বিপাকে পড়েছেন তাঁরা। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পরিবেশসহ একাধিক সহায়তা কার্যক্রম ঝুঁকিতে।” এনজিওবিষয়ক ব্যুরোর সূত্রের বরাতে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের ২৭৪টি এনজিও বিভিন্ন দেশ থেকে তহবিল (ফান্ড) পেয়ে থাকে। এর মধ্যে ইউএসএআইডির ফান্ড পেত ৮৭টি এনজিও। এসব ডোনার এজেন্সির (দাতা সংস্থা) মাধ্যমে দেশে প্রায় ২৪০টি এনজিওর প্রকল্প পরিচালিত হতো। সেই হিসাবে ৩২৭টি এনজিওর ইউএসএআইডির ফান্ড স্থগিত হয়েছে।

সমকাল

স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি নিয়ে প্রধান প্রতিবেদন করেছে সমকাল। ‘বেসরকারিতে বাণিজ্য, সরকারিতে নৈরাজ্য’ শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারি হাসপাতালে শক্ত তদবির ছাড়া মিলছে না মুমূর্ষু রোগীর নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) বরাদ্দ। কোনো কোনো ক্ষেত্রে লাগছে ঘুষও। আর বেসরকারি হাসপাতালে এই সেবার নামে কাটা হচ্ছে রোগী ও স্বজনের পকেট। সমন্বয়হীনতার কারণে সরকারের কোনো উদ্যোগই কাজে আসছে না। উল্টো বেড়েছে আইসিইউতে নৈরাজ্য।

জনস্বাস্থ্য বিশ্লেষকদের বরাতে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এভাবে চলতে থাকলে পরিস্থিতি আরও বিপৎসংকুল হতে পারে। সরকারের উচিত এখনই আইসিইউর ব্যাপারে সুচিন্তিত পদক্ষেপ নেওয়া। বিশেষ করে অচল আইসিইউ সচল করার ব্যাপারে জোর দেওয়া উচিত।

ইত্তেফাক

রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রধান প্রতিবেদন করেছে ইত্তেফাক। ‘রাজধানীতে চাপাতি আতঙ্ক, নেপথ্যে কিশোর গ্যাং’ শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রায় এক দশক ধরে রাজধানীসহ সারা দেশে দাপিয়ে বেড়ানো কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের হাতে এখন উঠে এসেছে চাপাতি। পাড়া-মহল্লায় দিনে-দুপুরে চাপাতি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ছে ওরা। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর রাজধানীর অলিগলি থেকে শুরু করে রাজপথ পর্যন্ত চাপাতি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। এলাকার আধিপত্য বিস্তার থেকে শুরু করে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, এমনকি খুনোখুনির ঘটনাও ঘটছে এই চাপাতি বাহিনীর হাতে। এতে আতঙ্কিত রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহর-পাড়া-মহল্লার বাসিন্দারা।

যুগান্তর

দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রধান প্রতিবেদন করেছে যুগান্তরও। ‘আইনশৃঙ্খলার এত অবনতি কেন’ শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজধানীসহ সারা দেশে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের মতো অপরাধ। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির সূচক ক্রমেই ওপরে উঠে যাচ্ছে। পাড়া-মহল্লার গলিপথ থেকে শুরু করে রাস্তাঘাট সর্বত্র এখন ছিনতাই আতঙ্ক ভর করেছে। সন্ধ্যা নামলেই চারদিকে ছিনতাই-ডাকাতির আতঙ্কে সাধরণ মানুষ বাইরে বের হতে ভয় পায়। খোদ রাজধানীতে শত শত মানুষের সামনে রামদা দিয়ে রিকশা আরোহীর ওপর সন্ত্রাসী হামলার মতো ঘটনা ঘটছে। এমনকি বাসের মধ্যেও কেউ এখন নিজেকে নিরাপদ ভাবতে পারছেন না। ডাকাতি করে সর্বস্ব লুট করা ছাড়াও ধর্ষণের মতো পৈশাচিক ঘটনা ঘটছে। প্রতিদিনই সারা দেশে এ রকম অপরাধ চিত্র বাড়ছে। তবে এত পুলিশ থাকার পরও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কেন এত অবনতি হচ্ছে-সেটি নিয়ে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ আর প্রশ্নের শেষ নেই।

বণিক বার্তা

সমবায়ের ধারণা বিষয়ে শনিবার প্রধান প্রতিবেদন করেছে বণিক বার্তা।  ‘সমবায় মডেল: বৈশ্বিকভাবে সফল হলেও বাংলাদেশে চরম ব্যর্থতায়’ শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সমবায় মালিকানাকে গুরুত্ব দিয়ে সংবিধানের ১৩ অনুচ্ছেদে অন্তর্ভুক্ত করে স্বীকৃতি দেয়া হয়। বর্তমানে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের অধীন একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে বার্ড। পল্লী উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখার জন্য বার্ড ১৯৮৬ সালে ‘স্বাধীনতা পদকও লাভ করে। কিন্তু সরকারের যথাযথ সহায়তা ও পৃষ্ঠপোষকতা না থাকায় বার্ড মডেল সামনে থাকলেও দেশে পরে আর কোনো শক্তিশালী সমবায় প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি। সমবায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও স্বীকার করছেন, সমবায়ের ধারণাকে এগিয়ে নিতে পরে আর কাজ করা হয়নি। নতুন কোনো উদ্ভাবনী ধারণাও তৈরি করা যায়নি।

নয়াদিগন্ত

একুশে ফেব্রুয়ারির আয়োজন ঘিরে শনিবার প্রধান প্রতিবেদন করেছে নয়াদিগন্ত। ‘বৈষম্যমুক্ত সমাজের অঙ্গীকার‘ শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অমর একুশে ফেব্রুয়ারিতে ভাষা আন্দোলনের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন সর্বস্তরের মানুষ। মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার রাতের প্রথম প্রহর থেকেই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মানুষের ঢল নামে। ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথে দলে দলে মানুষ ফুল নিয়ে শহীদ মিনারে আসেন। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে তারা ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন ও সব শ্রেণিপেশার মানুষ শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণে শামিল হন।

দেশ রূপান্তর

রাশিয়ায় মানবপাচার সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে প্রধান প্রতিবেদন করেছে দেশ রূপান্তর। ‘রাশিয়ায় যোদ্ধা পাচারে ৬৭ চক্র’ শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অন্তত ৩৫ বাংলাদেশি দালালচক্রের খপ্পরে পড়ে রাশিয়া ও ইউক্রেনে যুদ্ধে অংশ নিতে বাধ্য হয়েছেন। তাদের সবার পরিবারেরই একই প্রশ্ন– কীভাবে আটকাপড়াদের ফেরত আনা যায়? অবশ্য ভুক্তভোগী বেশিরভাগ পরিবারের সদস্য জানেন না, আটকেপড়া তাদের স্বজনরা কী অবস্থায় আছেন। যাদের মাধ্যমে পাচারের ঘটনা ঘটেছে, তাদের শাস্তির আওতায় আনার দাবি তুলেছে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো।

আজকের পত্রিকা

জুলাই হত্যাকাণ্ডের আসামিদের ধরতে পুলিশের তৎপরতা নিয়ে প্রধান প্রতিবেদন করেছে আজকের পত্রিকা। “নেতা-কর্মীদের ‘বিশেষ’ তালিকা করছে পুলিশ” শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিভিন্ন মামলার আসামি এবং গ্রেপ্তার হওয়া ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ এবং এর ভ্রাতৃপ্রতিম ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের একটি ‘বিশেষ’ তালিকা তৈরি করছে পুলিশ কর্তৃপক্ষ। পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে কাজটি করছেন জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও পুলিশের বিশেষ শাখার (ডিএসবি) সদস্যরা। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, গুরুত্বপূর্ণ মামলার পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তার এবং গ্রেপ্তার আসামিদের জামিন আইনি প্রক্রিয়ায় ঠেকাতে কেন্দ্রীয়ভাবে এই তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, পুলিশের প্রক্রিয়াধীন তালিকায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে হওয়া মামলা, জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর ও মোবাইল ফোনের নম্বর থাকছে। তাঁদের জামিন প্রতিরোধে প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে বিরোধিতা করার পরিকল্পনাও রয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তর, জেলা পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা ও পাবলিক প্রসিকিউটর সূত্রে এ তথ্য বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

ডেইলি স্টার

সরকারের রাজস্ব আয় সংক্রান্ত এক সংবাদকে শনিবার প্রধান প্রতিবেদন করেছে ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার। ‘Ambitious revenue target in the works’শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,সরকার এই অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে একটি উচ্চাভিলাষী রাজস্ব বৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। কারণ, তিনটি প্রধান উন্নয়ন অংশীদার দেশীয় সম্পদের সংগ্রহ বাড়ানোর ওপর জোর দিচ্ছে। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য এনবিআরকে আগের অর্থবছরের প্রকৃত সংগ্রহ থেকে প্রায় ২৮ শতাংশ সংগ্রহ বাড়াতে হবে, যদিও প্রথম ছয় মাসে এর রাজস্ব সংগ্রহ ০.৯৮ শতাংশ কমেছে।

আরও পড়ুন