যৌন সঙ্গম খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থানের মতোই গুরুত্বপূর্ণ। এই কথাটা অনেক সময় মানতে চায় না অনেকেই। কিন্তু এবার সেই কথাটাই যেন মেনে নিচ্ছে ইউরোপীয় দেশ ইতালি। তাই এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।
প্রথমবারের মতো কারাগারে ‘সেক্স রুম’ খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইতালি। এই ‘সেক্স রুম’-এ জেলবন্দি কয়েদিরা তার সঙ্গীর সঙ্গে দেখা করার এবং তার সঙ্গে সঙ্গমে লিপ্ত হওয়ার সুযোগ পাবেন।
আদালতের নির্দেশে সংশোধনাগারে বন্দীদের অন্তরঙ্গ সময় কাটানোর জন্য বা আরও পরিষ্কার করে বললে যৌন মিলনের জন্য বিশেষ ঘর তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এবার থেকে জেলের ভিতরে স্ত্রী বা দীর্ঘদিনের সঙ্গম সঙ্গীর সঙ্গে মিলনের সুযোগ পাবেন জেলবন্দিরা।
শুক্রবারই সেন্ট্রাল উমবেরিয়া রিজিয়নে টেরনি সংশোধনাগারে এই বিশেষ ‘সেক্স রুম’-এ চালু করা হয়েছে। জেলবন্দী এক কয়েদি নিজের নারী সঙ্গীর সঙ্গে ওই ঘরে বিশেষ সময় কাটান।
সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের একটি প্রতিবেদন অনুসারে আদালতের রায়েই এই ব্যবস্থা করা হয়েছে। কোনও নিরাপত্তা রক্ষীর উপস্থিতি ছাড়াই সঙ্গীর সঙ্গে একান্তে ২ ঘণ্টা সময় কাটানোর সুযোগ পাবেন কয়েদিরা।
আদালতের নির্দেশ অনুসারে কেবল বিশেষ অনুমতি প্রাপ্ত বন্দীরা ‘সেক্স রুম’এ নির্ধারিত সময়ের জন্য সঙ্গীর সঙ্গে কাটানোর সুযোগ পাবেন। জেলের মধ্যেই করতে হবে সেই বিশেষ ঘরের বন্দোবস্ত। তাতে থাকবে খাট, বিছানা, বালিশ। থাকতে হবে একসঙ্গে বাথরুমও।
সঙ্গমের সময়ে কোনও নিরাপত্তারক্ষী উপস্থিত না থাকলেও ঘরের দরজা বন্ধ করা যাবে না। প্রয়োজনে হস্তক্ষেপ করতে পারবেন নিরাপত্তা রক্ষীরা।
বন্দীদের অধিকার বিষয়ক এক আধিকারিক জিউসেপ্পে ক্যাফোরিও সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, প্রথম বারের জন্য এক বন্দীর সঙ্গে তার সঙ্গীর সাক্ষাৎ সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন হয়েছে। বন্দীদের গোপনীয়তা বজায় রেখে পরীক্ষামূলক এই সাক্ষাৎটি ভাল ভাবে উতরে যাওয়ায় ভবিষ্যতে আরও কিছু বন্দীর জন্য অনুমতি দেওয়া হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
২০২৪ সালে এই রায় দিয়েছিল আদালত। নির্দেশ দিয়ে জানায়, জেলবন্দিদের স্বামী, স্ত্রী বা তার দীর্ঘমেয়াদী সঙ্গীর সঙ্গে একান্ত সাক্ষাতের অধিকার থাকা উচিত। সে সাক্ষাত পর্বে কড়া নজরদারি থাকার কোনও প্রয়োজন নেই। তবে নিরাপত্তার খাতিরেই দরজা খোলা রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ইউরোপের বেশির ভাগ দেশে এই অনুমতি ইতিমধ্যেই রয়েছে। এই তালিকায় ফ্রান্স, জার্মানি, স্পেন, সুইডেন এবং অন্যান্য দেশ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ইতালিও সেই তালিকায় নিজের নাম লিখেছে।
আইন করে না হলেও ভারতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই উদাহরণ দেখা গিয়েছে। পঞ্জাবের একটি জেলে ৬০ বছরের এক বন্দী ২০২২ সালে প্রথম সঙ্গমের অনুমতি পান। গোবিন্দওয়াল সাহিব সেন্ট্রাল জেল, নাভার নতুন জেলা জেল, ভাটিন্ডার নারী জেলে এই ব্যবস্থা চালু রয়েছে।
কুখ্যাত অপরাধী, গ্যাংস্টার, জীবনের ঝুঁকি রয়েছে এমন কোনও বন্দি বা যৌন হেনস্থার সঙ্গে যুক্ত কিংবা যৌন অপরাধীরা এই সুযোগ পান না।
যদি বন্দীর আচরণ ভাল হয় তবেই ৩ মাসে একবার মিলবে সঙ্গমের সুযোগ। ওই ঘরের সঙ্গে শৌচালয় থাকাটাও বাধ্যতামূলক। দেওয়া হয় কন্ডোমও।
ইউরোপের মধ্যে ইতালির কারাগারগুলিতে বন্দীর হার সবচেয়ে খারাপ। সম্প্রতি আত্মহত্যার হারও বেড়েছে। সরকারি তথ্য অনুসারে, দেশে ৬২,০০০ এরও বেশি বন্দী রয়েছে, যা কারাগারের সর্বোচ্চ ধারণক্ষমতার চেয়ে ২১% বেশি।
রাশিয়া, জার্মানি, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, স্পেন, ফিলিপাইন, কানাডা, সৌদি আরব এবং ডেনমার্কের মতো অনেক দেশ এবং কিছু মার্কিন রাজ্য বিবাহিত জীবনসঙ্গীর সঙ্গে দেখা করার অনুমতি তো দেয়ই। এমনকি ব্রাজিল এবং ইজরায়েল সমকামী সঙ্গীদেরও সময় কাটানোর অনুমতি দেয়।