তীব্র তুষার ঝড়ের কবলে যুক্তরাষ্ট্র

ফাইল ছবি।
ফাইল ছবি।

বড় ধরনের তুষার ঝড়ের কবলে পড়ছে যুক্তরাষ্ট্র, যা মৌসুমের সবচেয়ে তীব্রতর হওয়ার আশঙ্কা করছে দেশটির মহাসাগর ও বায়ুমণ্ডলীয় প্রশাসন।  

শনিবার বিকেল থেকে সোমবার পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ১৩শ’ মাইল এলাকাজুড়ে ব্যাপক তুষারপাত, বৃষ্টি এবং প্রচণ্ড বজ্রপাতে প্রায় ৬২ মিলিয়ন মানুষের জীবনযাত্রায় প্রভাব ফেলবে বলে সিএনএনের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

এখন পর্যন্ত উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে শীতের তুষারপাত সীমিত থাকলেও এই তুষারঝড় সেই ধারা ভেঙে প্লেইনস থেকে ইস্টকোস্ট পর্যন্ত লাখ লাখ মানুষের জন্য বিপজ্জনক পরিস্থিতি বয়ে আনবে। এমনকি যে এলাকাগুলোতে শীতকালীন বিরূপ আবহাওয়া খুব একটা দেখা যায় না সেসব এলাকায়ও এর প্রভাব পড়বে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, তুষারপাত, বরফ এবং ঝড়ো হাওয়ায় আক্রান্ত হতে পারে অন্তত ১২টি রাজ্য। যার ফলে ওই অঞ্চলগুলোতে বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সোমবার রাতের মধ্যে শক্তি হারিয়ে পূর্ব উপকূল দিয়ে ঝড়টি বেরিয়ে যাওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে ন্যাশনাল ওসিয়ানিক অ্যান্ড অ্যাটমসফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বা এনওএএ।

এনওএএ এর আবহাওয়া পূর্বাভাস কেন্দ্র সতর্ক করে বলেছে, কিছু কিছু এলাকায় গত এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ ভারী তুষারপাতের দেখা মিলতে পারে।

আর যেসব অঞ্চলের তাপমাত্রা তুলনামূলক উষ্ণ, সেখানে তীব্র বজ্রসহ ঝড় হতে পারে। যার মধ্যে কিছু কিছু অঞ্চল ডিসেম্বরের ঝড়ের ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে।

উইন্টার স্টর্ম সিভেরিটি ইনডেক্সের মতে, ঝড়ের কারণে রোববার থেকে প্রতিদিনের জীবনে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। গাড়ি চালানোর ক্ষেত্রে বিপজ্জনক বা অসম্ভব পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে। সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হতে পারে।

শনিবার বিকেলে শুরু হওয়া ঝড়টি মেক্সিকো উপসাগরের আর্দ্র বাতাসে চালিত হয়ে উত্তরের দিক থেকে ধেয়ে যাচ্ছে।

সেখান থেকে ঝড়টি পূর্বমুখী হবে এবং রোববার সকালে মিসিসিপি ভ্যালি এবং মিডয়েস্টের কিছু অংশে বিপর্যয় সৃষ্টি করে ওহাইও ভ্যালি এবং সাউথইস্টের দিকে এগিয়ে যাবে। রোববার রাত ও সোমবার ইস্ট কোস্টে পৌঁছুবে সেটি।

ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো চিহ্নিত করা হলেও ঠিক কতটা তুষারপাত, বরফ অথবা বৃষ্টি হবে তা বলা সম্ভব নয়। ঝড়ের গতি প্রকৃতির সাথে পরিস্থতি এবং তুষারপাতের দিক পরিবর্তিত হতে পারে বলে পূর্বাভাসে বলা হয়েছে।

বরফে ঢেকে যাবে

রোববার ওহাইও ভ্যালি এবং সোমবার মধ্যরাতের মধ্যে মিড-অ্যাটলান্টিকে পৌঁছুলে ভারী তুষারে ওয়াশিংটন ডিসি এবং ফিলাডেলফিয়াতে চলাচলে বিপর্যয় দেখা দেবে।

শীতপ্রধান মিসৌরি, ইলিনয়, ইন্ডিয়ানা, ওহাইও এবং পশ্চিম ভার্জিনিয়ার কিছু অংশে বেশি তুষারপাতের আশঙ্কা করা হচ্ছে। আর তুলনামূলক উষ্ণ অঞ্চলে তুষারপাতের বদলে শিলা বা বরফ পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

জানুয়ারির ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি তুষারপাতের আশঙ্কা জানিয়ে কয়েকটি বড় শহরকে ইতোমধ্যে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে।

রোববার মিসৌরিতে কোনো কোনো জায়গায় এক ইঞ্চি থেকে এক ফুটের বেশি তুষারপাত হতে পারে; যা ঝড়ের গতির ওপর নির্ভর করবে। পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলোর জন্যও এই পূর্বাভাস প্রযোজ্য এবং সেখানের কিছু অঞ্চলে ইতিহাসের সর্বোচ্চ তুষারপাতও হতে পারে।

এদিকে কানসাস সিটি এবং ইন্ডিয়ানাপলিসসহ বেশ কিছু শহর অতিরিক্ত তুষারপাতের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে।

কানসাস সিটিতে ২০১১ সালের সর্বোচ্চ ৭.২ ইঞ্চির এবং ইনডিয়ানাপোলিসসে ২০১৪ সালের ১১.৪ ইঞ্চি তুষারপাতের রেকর্ড ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে পূর্বাভাসে বলা হয়েছে।

মিসৌরির ক্যানসাস সিটি ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট শনিবার দুপুরে এক্স হ্যান্ডলে এক পোস্টের মাধ্যমে জানায়, ‘বরফ জমে যাওয়ায়’ শনিবার দুপুরের প্রায় দুই ঘণ্টা রানওয়ে বন্ধ ছিল।

সিটি মেয়র কুইন্টন লুকাস বলেন, কর্মীরা পরিষ্কার করার পর রানওয়ে খুলে দেয়া হয়েছে।

শনিবার বিকেলে এক্সে দেওয়া এক পোস্টে ওয়েদার সার্ভিস জানিয়েছে, কানসাস সিটির মেট্রো এলাকায় ‘তুষার বৃষ্টি’ হচ্ছে যার ফলে ওই এলাকা তুষারে ঢেকে যাচ্ছে।

ঝড়টি দক্ষিণমুখী হওয়ায় মিনেসোটা, উইসকনসিন, মিশিগান এবং নিউ ইয়র্ক কম অথবা একেবারেই তুষারপাতের সম্ভাবনা নেই বলেও পূর্বাভাসে বলা হয়েছে

পূর্বাভাসে উল্লেখ করা হয়, তুষারপাত বেশি হওয়া অঞ্চলের ঠিক দক্ষিণাঞ্চলেও ঝুঁকি রয়েছে। কানসাস ও মিসৌরি থেকে সেন্ট্রাল অ্যাপালাচিয়ানস এবং মেরিল্যান্ড ও ডেলাওয়ারের কিছু অংশে বরফ পড়তে পারে। ওইসব অঞ্চলে চলাচল ‘প্রায় অসম্ভব’ হয়ে যেতে পারে বলে ন্যাশনাল ওয়েদার অফিসগুলো সতর্কতা দিয়েছে।

ঝড়ের আগে কেন্টাকি এবং ভার্জিনিয়ায় জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। আর প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে ম্যারিল্যান্ড অঞ্চলের বাসিন্দাদের।

কেন্টাকির গভর্নর এন্ডি বেশিয়ার বলেন, “তুষার ঝড় আমাদের রাস্তাগুলোকে বিপর্যয়ময় ও বিপজ্জনক করে তুলবে; বিদ্যুৎ বিভ্রাটও হতে পারে। ঝড় শুরুর ২৪ ঘণ্টা আগেই কনকনে ঠাণ্ডা হয়ে আসছে।”

কেন্টাকি এবং মিসৌরি, ইলিনয়স ও ইন্ডিয়ানার দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় পৌনে এক ইঞ্চি বরফ পড়তে পারে। বরফে হাঁটাচলা করা ও গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়বে।

ঝড়ের প্রভাবে রোববার দুপুরের দিকে দক্ষিণ পাশের উষ্ণ অঞ্চলের বেশিরভাগ এলাকায় বৃষ্টি এবং বজ্রসহ বৃষ্টি তীব্রতর হতে পারে। বজ্র্রঝড় ছাড়াও ওই অঞ্চলে টর্নেডো এবং প্রবল বৃষ্টির ফলে বন্যার আশঙ্কা রয়েছে।

আরও পড়ুন